আজ সব ফিকে, সাহসী কমরেডের থামল লড়াই, স্মরণে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্য রাজনীতির আকাশে বড় নক্ষত্রপতন। বাম রাজনীতির অন্তিম নক্ষত্রের পতনে শোকাহত গোটা রাজ্য। ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ উত্তর কলকাতায় জন্ম হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharjee)। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে ১৯৬১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখানেই দীক্ষিত হলেন বামপন্থার মন্ত্রে। প্রেসিডেন্সি থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পাশ করে তৎকালীন সিপিআই (CPI) এর সঙ্গে খাদ্য আন্দোলনের মাধ্যমে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে। সেই থেকেই যাত্রা শুরু কমরেডের।

স্মরণে ব্র্যান্ড বুদ্ধ (Buddhadeb Bhattacharjee)

১৯৬৬ সালে সিপিএম দলে যোগদান। তারপর ১৯৬৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের দ্য ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশনের সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে প্রথম কাঁধে বড় দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর। এরপর তাঁর রাজনৈতিক উত্থানে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৭১ সালে সিপিএম পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য, তারপর ১৯৭৭ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া।

   

প্রথম বাম সরকারের আমলে তাঁর উপর বর্তায় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের দায়িত্ব। দীর্ঘদিন ওই দফতরের দায়িত্ব সামলান বুদ্ধবাবু। এরপর ২০০০ সাল, জ্যোতি বসু অবসর আর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। ২০০০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন বাম নেতা।

প্রথম দিকে রাজনৈতিক উত্তরণ ছিল সাফল্যে মোড়া হলেও ২০০৬ সালের দিকে এসে খানিক ছন্দপতন। সেই সময় থেকে একের পর এক জমি আন্দোলনে বারংবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে। সিঙুরে টাটা মোটরসের কারখানা তৈরির প্রকল্প নিয়ে বিরাট ধাক্কা। সেই সময়েই রাজ্যে বিপুল উত্থান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের। এরপরই আমূল বদলে যায় বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণ। ধীরে ধীরে বুদ্ধবাবুর পায়ের নিচ থেকে আলগা হতে হতে থাকে জমি।

Buddhadeb Bhattacharjee

আরও পড়ুন: প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দীর্ঘ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন দখল করে তৃণমূল। তারপর থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে ফেলেন বুদ্ধবাবু। এরপর তাকে ঘিরে ধরে রোগ-যন্ত্রনা। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়তে থাকে বুদ্ধবাবু। শারীরিক অসুস্থতার জেরে দলের পলিটব্যুরো থেকে অব্যহতি নেন তিঁনি। তবে কোনোমতেই ছাড়তে চাননি পাম অ্যাভিনিউর ২ কামরার ফ্ল্যাট। প্রাণের চেয়েও প্ৰিয় পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি, সেখানেই আজ বৃহস্পতিবার সকালে ৮টা ২০ নাগাদ নিঃশ্বাস ত্যাগ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। কমরেডদের ফেলে রেখে কখনও না ফেরার দেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শুধুই রেখে গেলেন সোনায় মোড়ানো অগুনতি স্মৃতি।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর