বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান যুগে কচিকাঁচারা ছোট থেকেই মোবাইল বা কম্পিউটারের প্রতি তীব্রভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেও বছর দশেক আগে পর্যন্ত দেখা যেতনা এই চিত্র। বরং সেই সময়ে সকলেই খেলাধুলার পাশাপাশি, একদম ছোট থেকেই সাইকেল শেখার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করত।
তখনকার সময়ে জন্মদিন থাকলেই কিংবা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলেই বাবা-মায়েরা সন্তানদের উপহার দিতেন নতুন সাইকেল। যা পেয়ে স্বভাবতই খুশি হত বাচ্চারাও। আর সাইকেল বলতেই একবাক্যে সকলেই চিনতেন “হিরো” সাইকেলকে।
তবে, সময়ের সাথে সাথে সাইকেল উপহার দেওয়ার মত ঘটনায় পরিবর্তন এলেও হিরো সাইকেলের জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি। বরং, এখনও সাইকেলের দুনিয়ায় দাপটের সাথে রয়েছে এই ব্র্যান্ড।
সবার প্রথমে হিরো সাইকেলের সফর শুরু হয়ে পাকিস্তানের কামালিয়া শহর থেকে। সেখানে বাহাদুর চাঁদ মুঞ্জাল এবং ঠাকুর দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হিরো সাইকেলের চার প্রতিষ্ঠাতা। তাঁরা হলেন সত্যানন্দ, ওমপ্রকাশ, ব্রজমোহন লাল এবং দয়ানন্দ মুঞ্জাল। এঁদের হাত ধরেই পথচলা শুরু হয় হিরো সাইকেলের।
বাহাদুর চাঁদ মুঞ্জাল এক সবজির দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সবকিছু প্রায় ঠিকঠাক চললেও আচমকাই দেশ বিভাজনের সময় এলে পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দু এবং শিখদের ভারতে চলে আসতে হয়। তারপরেই বাহাদুর চাঁদ মুঞ্জাল ভারতের পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় চলে আসেন।
কিন্তু, এখানে এসেই তাঁরা প্রবল আর্থিক অনটনে পড়েন। এমতাবস্থায়, মুঞ্জাল ভাইয়েরা সাইকেলের বিভিন্ন পার্টস বিক্রি করা শুরু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই ১৯৫৬ সালে ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে তাঁরা নিজেরাই লুধিয়ানায় সাইকেলের পার্টস বানানোর একটি ইউনিট শুরু করে ফেলেন।
এইভাবেই হিরো সাইকেলের উত্থানের কাহিনি শুরু হয়ে যায়। ধীরে ধীরে মুঞ্জাল ভাইয়েরা সাইকেলের পার্টস বিক্রির বদলে পুরো সাইকেল বানিয়েই তা বিক্রি করতে থাকেন। তৎকালীন সময়ে তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ২৫ টি করে সাইকেল বানাতেন। ১৯৬৬ সাল নাগাদ হিরো কোম্পানি বছরে ১ লক্ষ সাইকেল তৈরি করে তা বিক্রি করতে থাকে।
এদিকে, ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত হিরো সাইকেল প্রতি বছর ২২ লক্ষ সাইকেল উৎপাদন করতে থাকে। এমনকি, আশির দশকে প্রতিদিন প্রায় ১৯ হাজার সাইকেল তৈরি করতে থাকে এই কোম্পানি। যা “গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড”-এও স্থান করে নেয়। স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানিটি ততদিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইকেল কোম্পানির তকমাও পেয়ে যায়।
ভারতের পাশাপাশি, এই সাইকেল ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের দরবারেও। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৭০ টি দেশে রপ্তানি করা হয়ে হিরো সাইকেল। এছাড়াও, ২০০৪ সালে ব্রিটেন এই কোম্পানিকে “Super Brand”-এর তকমা দেয়। এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে এই কোম্পানির ৭৫০০-রও বেশি আউটলেট রয়েছে। এবং ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করেন এই সংস্থায়।
স্বাভাবিকভাবেই শূন্য থেকে শুরু করে হিরো সাইকেলের এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পেছনে মুঞ্জাল ভাইদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রতিটি বাধা এবং প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে তাঁরা তিলে তিলে তৈরি করেছেন এই কোম্পানি। যদিও, ১৯৬০-এর দশকে দয়ানন্দ মুঞ্জাল মারা গেলেও হাল ছাড়েন নি বাকিরা। বরং সকলে একজোট হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন “হিরো”কে। তবে, মুঞ্জাল ভাইদের সকলেই বর্তমানে পরলোকগমন করেছেন। আপাতত বর্তমানে ওমপ্রকাশ মুঞ্জালের ছেলে পঙ্কজ মুঞ্জাল কোম্পানিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।