বাংলা হান্ট ডেস্ক : গত মঙ্গলবার ফ্রান্সে এক ১৭ বছর বয়সি তরুণকে গুলি করে হত্যা পুলিস। তার পর থেকেই বিক্ষোভের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে রাজধানী প্যারিস সহ প্রায় গোটা ফ্রান্স (France unrest)। টানা প্রায় চারদিন প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বিভিন্ন শহরে। বিপুল পুলিস বাহিনী মোতায়েন করেও যা এখনও থামানো যায়নি।
রক্তক্ষয়ী হিংসা রুখতে যাবতীয় দিক আলোচনা করে দেখা হচ্ছে। এমনই জানাল ফ্রান্স সরকার। তবে ঠিক কী কী বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আপাতত জরুরি অবস্থা জারি করা হচ্ছে না। অবশ্য পুলিসের গুলিতে আলজারিয়া এবং মরক্কোর বংশোদ্ভূত এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে ফ্রান্সে যে হিংসা ছড়িয়েছে, তা কার্যত ফ্রান্স সরকারের হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ি, বাস, গাড়ি। নির্বিচারে অসংখ্য দোকানে লুটপাঠ চলেছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আহত হন ২০০-র বেশি পুলিস আধিকারিক।
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্যারিসের শহরতলিতে পুলিসের গুলিতে মৃত্যু হয় ১৭ বছরের নাহেল এমের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, গাড়ির চালকের আসনের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন দুই পুলিস আধিকারিক। প্রাথমিকভাবে কোনও বিপদের কিছু না থাকলেও চালককে লক্ষ্য করে এক আধিকারিক গুলি চালিয়ে দেন।
সেই ঘটনার পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। লাগাতার বৈষম্যের কারণে গরিব, ভিন্ন বর্ণের মানুষের মধ্যে ক্রমশ যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল, তা মঙ্গলবারের ঘটনার পর আগ্নেয়গিরির ফুটন্ত লাভার মতো বেরিয়ে আসতে থাকে। ফ্রান্সের বিভিন্ন শহর এবং শহরতলি এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। প্যারিসের তুলনামূলক নিম্নবিত্ত এলাকা, মার্সেই, লিয়ঁ, তুলুস, লিলির মতো জায়গায় লাগামছাড়া হিংসা ছড়িয়েছে। পোড়ানো হয়েছে অসংখ্য গাড়ি। লিয়ঁ ট্রামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। উত্তর প্যারিসে একটি ডিপোয় ১২টি বাস পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
এখন পরিস্থিতি এমনই হয়েছে যে ফ্রান্সের একাধিক বড় শহরে গণপরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সূত্র উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে যে প্যারিসে প্রতিদিন রাত ন’টার পর থেকে বাস এবং ট্রাম পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে।
ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেইতে সন্ধ্যা সাতটার পর গণপরিবহণ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশানের তরফে জানানো হয়েছে, রাতভর ৮৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০০-র বেশি পুলিস আহত হয়েছেন। ৪০,০০০-র বেশি পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে।