বাংলা হান্ট ডেস্ক : সবকিছুই যেন কেমন স্তব্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে গোটা দেশটাই যেন চলে গিয়েছে পুলিসের দখলে চলে গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় কড়া পাহাড়া, নাকা চেকিং। পুলিসের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন ধরে অশান্তির যে আগুন জ্বলছে, তা গতকাল থেকেই অনেকটা তিথিয়েছে। ফ্রান্সের (France Unrest) সরকারি সূত্রে খবর শুক্রবার রাত পর্যন্ত ১৩১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিভাবে শুরু হল বিদ্রোহ? গত মঙ্গলবার প্যারিসের একটি ট্রাফিক সিগন্যালে নাহেল নামক ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে ট্রাফিক পুলিস। অভিযোগ, ট্রাফিক সিগন্যালে নাহেল গাড়ি নিয়ে দাঁড়াতেই কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিস তাঁর দিকে বন্দুক তাক করেন। ভয় পেয়ে ওই কিশোর ওখান থেকে পালানোর চেষ্টা করতেই পুলিস গুলি চালায়। বুকে গুলি লাগে নাহেলের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরের। এরপরই বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে গোটা ফ্রান্স জুড়ে।
আজ রবিবার সকালে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। তবে প্যারিস-সহ মার্সেইল, নিস, স্ট্রাসবুর্গ শহরে বিক্ষিপ্ত ভাবে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মার্সেইল শহরে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়ায়। গভীর রাতের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে বাধ্য হয় পুলিস। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত অন্তত ২ হাজারটি সরকারি গাড়িতে আগুন ধরিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। কম-বেশি জখম ২০০ জন পুলিসকর্মী। ধৃতদের গড় বয়স ১৭।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্রিটেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলি ফ্রান্সের সংঘর্ষবিধ্বংস্ত এলাকাগুলি থেকে তাঁদের পর্যটকদের দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই প্রতিবাদের জেরে যথেষ্ট চাপে ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল মাক্রঁ। রবিবার থেকে নির্ধারিত জার্মানি সফর পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্যারিস, লিয়ঁ, মার্সেইল-সহ বড় শহরে এর মধ্যেই সব মিলিয়ে অন্তত ৪৫ হাজার পুলিসবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সাঁজোয়া গাড়ি, হেলিকপ্টার নিয়ে তৈরি তাঁরা।
এদিকে, এই চরম বিক্ষোভের মধ্যেই সমাহিত করা হয় আলজিরিয় বংশোদ্ভূত তরুণ, নাহেল এম-কে। নাহেলের শেষকাজে তাঁর মা ও দিদিমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন শয়ে শয়ে মানুষ। প্যারিসের মফঃস্বল শহর নানতেরে-য় সমাহিত করা হয় তরুণকে। গত মঙ্গলবার, ট্র্যাফিক সিগন্যালে এই নাহেল-কেই গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে এক পুলিস আধিকারিকের বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই জ্বলছে ফ্রান্স।
ঘটনার প্রতিবাদে সাদা জামা পরে রাস্তায় নামেন বহু মানুষ। গাড়ির হর্ন বাজিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ জানান। যদিও এই ধরনের প্রতিবাদকে প্রশাসন যে মোটেও ভাল চোখে দেখছে না, সে বার্তা আগেই দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। অভিভাবকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ছিল, সন্তানদের হিংসা থেকে দূরে রাখুন। আন্তর্জাতিক মহলের বক্তব্য, ২০১৮ সালের ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের পর এত বড় মাপের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি ফরাসি প্রেসিডেন্টকে।