বাংলা হান্ট ডেস্কঃ স্কুল সার্ভিস কমিশন সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় ক্রমশ চাপ বেড়ে চলেছে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। প্রথমে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে বাধ্য হন পার্থ। আবারো একবার যখন তাঁর নিজাম প্যালেস হাজিরা দেওয়ার জল্পনা উঠে আসছে, সেই মুহূর্তেই পার্থ ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তুলল এলাকাবাসী।
অভিযুক্ত অতনু গুছাইত কোলাঘাটের বাসিন্দা। তবে বর্তমানে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পরেই সে এবং তার গোটা পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে খবর। ঘটনাটি সামনে উঠে আসার পরেই তৃণমূল দল নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলে, “দলের সঙ্গে অনেকদিন ওর কোনোরকম যোগাযোগ নেই। ফলে ও কি করছে, তা সম্পর্কে দল অবগত নয়।”
কোলাঘাটের কোলা গ্রামের বাসিন্দা অতনু এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিল এবং পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবেও কাজ করে অতীতে। তবে এছাড়া অন্যান্য সেরকম কোনো কাজ না করলেও এলাকায় তাদের বাড়ি চোখে পড়ার মতো। এমনকি এলাকাবাসীদের অভিযোগ, দুর্গাপূজার সময় একাধিক নামকরা শিল্পীদের নিয়ে আসত অতনু ও তার ভাই শান্তনু গুছাইত। তবে শুধু তাই নয়, তার স্ত্রী মানসীও নাকি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, এমনই অভিযোগ বর্তমানে তুলেতে আরম্ভ করেছে এলাকাবাসী। অতনুর স্ত্রী আবার পেশায় একজন শিক্ষিকা।
যদিও বর্তমানে অতনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ জানিয়েছে, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” এলাকায় পার্থ ঘনিষ্ঠ হলে দাবি করা এই অতনুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে সেখানকার যুবক-যুবতী সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, টাকা হাতিয়ে একাধিক চাকরিপ্রার্থীদের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি এবং এসএসসিতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিত এই নেতা। এক্ষেত্রে যেমন এসএসসিতে ঢোকানোর জন্য 16 লক্ষ টাকা দাবি করত অভিযুক্ত, ঠিক সেরকম ভাবে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-তে সেই অর্থের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে 12 লক্ষ এবং 10 লক্ষ টাকা। এমনকি টাকা দিতে না পারলে সোনার গয়না পর্যন্ত জমা রাখতো অতনু।
সুত্রের খবর, 2019 সালের পর থেকে এলাকায় তার সেই প্রতিপত্তি অনেকাংশে কমে যায়। 2021 সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে যখন ব্রাত্য বসু শিক্ষামন্ত্রী হয়ে আসেন, সেই মুহূর্তে আরো চাপে পড়ে যায় অতনু। এরপরে একাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েও তাদেরকে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এবং পরবর্তীতে অতনু এবং তার ভাই শান্তনু সহ গোটা পরিবার এলাকাছাড়া হয়।
এলাকার এক যুবক প্রসেনজিৎ কুইলা বলেন, “অতনু ও তার স্ত্রী মিলে আমার পরিবারের 4 জনকে চাকরি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পার্থর সাথে ভালো যোগাযোগ রয়েছে বলাতে আমরা বিশ্বাস করে তাকে 65 লক্ষ টাকা দিই। কিন্তু এরপর কারোর চাকরি হয় নি আর আমাদের টাকাও ও ফেরত দেয়নি। অপর এক যুবকের কথায়, “আমি অতনুকে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি আমার স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত জমা রাখি। কিন্তু বর্তমানে চাকরি তো পাইনি, উল্টে আমার টাকাও নিয়ে পালিয়েছে ও।”
গোটা ঘটনায় বর্তমানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিশানা করেছে সকল বিরোধী দল এবং এর দরুণ তৃণমূল নেতাকে নিয়ে বিতর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।