সৌতিক চক্রবর্তী,বোলপুর,বীরভূমঃ শ্যামল মাজির নাম বীরভূমের বোলপুর থানার অন্তর্গত ইক্ষুধারা গ্রামে সবারই জানা। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে পেশাগত কারণে তিনি বোলপুরের স্কুল বাগানের স্থায়ী বাসিন্দা। সেখানে তিনি ‘শ্যামল দা’র কোচিং সেন্টার’ নামে একটি পড়াশোনা কেন্দ্র চালান। সেই পড়াশোনা কেন্দ্রের পরিচালনায় ইক্ষুধারা গ্রামে শুক্রবার আয়োজন করা হয়েছিল বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির ও চারা গাছ বিতরণ অনুষ্ঠান। আর এ দিনের শিবিরে হাজির ছিলেন, বোলপুরের সুপরিচিত চিকিৎসক ডঃ প্রদীপ গাঙ্গুলী সহ অনেকেই। ছিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ। এই শিবিরে ডাক্তারবাবুদের কাছে শারীরিক সমস্যার কথা জানাতে প্রায় ৩০০ মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। রুগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দানের পাশাপাশি ঔষধ ও একটি করে চারাগাছ বিনামূল্যে দেওয়াও হয়েছিল।
এই দিন স্বাস্থ্য শিবিরে হার্টের নানা সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রোগের ও তার প্রতিকারের বিষয়ে আলোচনা করেন প্রদীপবাবু। উনি বলেন,এখন গতির যুগ। তাই এই এলাকায় হৃদরোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল রেখে চলতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষই শরীরের উপর নানা রকম ভাবে অত্যচার করেন।জীবনযাত্রার অনিয়ম, অত্যাধিক ধূমপান, মদ্যপান হার্টের রোগকে ত্বরান্বিত করে। তাই প্রদীপবাবুর উপদেশ,হার্টের অসুখ থেকে বাঁচতে ধূমপান ও মদ্যপান অবিলম্বে ত্যাগ করা উচিৎ। এমনকী প্রত্যেককে কম করে আধ ঘণ্টা জোরে হাঁটার পরামর্শও দেন তিনি।
প্রদীপবাবুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরে খুশি এলাকার বাসিন্দারাও। পেশায় চাষি ধেনা হাঁসদা বলেন,“ডাক্তারবাবু আমার সমস্ত রিপোর্ট ভালো করে দেখেন। এবং আমার রোগের প্রতিকারের সঠিক দিশা দেখান। ডাক্তারবাবু কাছে কাছাকাছি বসতে পেরে আমি ভীষণ গর্বিত এছাড়াও আমাদের গ্রামের ছেলে শ্যামল মাজি’কেও জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ এইরকম একটা শিবিরের আয়োজন করার জন্য।”
গ্রামের আরোও এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ শ্যামল আমাদের গ্রামের ছেলে ওর মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে। গরিব মানুষদেরকে ভালবাসতে জানে। ওর এই কাজকর্ম তে আমরা সকলেই খুশি।”
পড়াশোনা কেন্দ্রের মালিক শ্যামল মাজি বলেন,“আমি দিনমজুর ঘরের ছেলে। আমাদের পরিবারের ২২ জন সদস্যের মধ্যে আমিই প্রথম শিক্ষার আলো জ্বালি।অনেক লড়াই করে,ঘরে বাঁশের মাচা করে সারা রাত পড়াশোনা করতাম। অভাবের কারণে জড়ায়ুতে ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনি। ছোটো বেলায় রোগযন্ত্রণায় কাতর মাকে দেখে আমি মনে মনে ঠিক করি কোনো মানুষ যেন টাকার অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন। তাই আমি বিভিন্ন ডাক্তারবাবুদের অনুরোধ করে আমার এলাকায় স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করি। যেন আমার মতো আর কোনো সন্তান যাতে মাকে না হারায়।এছাড়াও পরিবেশে অসহায় অবস্থার কথা ভেবে চিকিৎসাকারি প্রত্যেক রুগিদের একটা করে চারা গাছ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নি।” জানা গেছে,অনেক সমাজ সেবামূলক কাজ করে থাকেন শ্যামলবাবু।বিভিন্ন গ্রামের গরীব স্টুডেন্টদের কোনো মাসে বেতন না নিয়েই ১৩ বছর ধরেই টিউশনি পড়িয়ে যাচ্ছেন। যাতে গরীব ছাত্রছাত্রীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।