বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: কোটিপতি জয়েশ দেশাইয়ের নাম আপনি নিশ্চয়ই শোনেননি। জয়েশ ভাওনগর জেলার গরিহার নামক একটি গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন। তার সাফল্যের গল্প অবশ্যই অনুপ্রাণিত করবে আপনাকে। গরিহারে তিনি বহু বছর ধরে অনেক আধুনিক এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই জীবন কাটিয়েছিলেন। একটি সাধারণ বৈষ্ণব বেনে পরিবারে জন্ম নেওয়া জয়েশের বাবা একটি ছোট মুদির দোকান চালাতেন। চার কন্যার পর চতুর্থ সন্তান হিসাবে জয়েশের জন্ম হয়। চার বোন নিয়ে এত বড় সংসারে থাকা ছেলেকেও আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।
পরিবারের সামান্য প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও তার বাবার কাছে সবসময় থাকতো না। ছোটবেলা থেকেই জয়েশকে প্রতি পদে পদে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেইসব সমস্যার কারণেই হয়তো জয়েশের মনে ছোটবেলা থেকে একটি জেদ গড়ে উঠেছিল। যা ভাববেন তা যেন তিনি করেই ছাড়বেন।
ছোটবেলা থেকেই জয়েশের গাড়ির প্রতি দারুণ আকর্ষণ ছিল। কিন্তু জয়েশ খুব ভালো করেই বুঝতেন যে তার আর্থিক অবস্থা এমন নয় যে তার পরিবারে গাড়ি কেনার মতো বিলাসিতার কথা ভাবতে পারে। সেই দিনগুলিতে তাদের গ্রামের অনেক পরিবার গ্রাম থেকে সুরাটে চলে গিয়েছিল এবং ধীরে ধীরে ভালো অর্থ উপার্জন শুরু করেছিল। ছুটিতে তাদের গাড়িতে করে গ্রামে যেতেন জয়েশ। সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রেরণাও নিতেন। জয়েশ পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে সময়ের সাথে সাথে আমাদের সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ লোকই সেখানকার বাস উঠিয়ে মুম্বাইয়ের দিকে শুরু হয়েছিল। তার বড় বোন ভাবনার সহায়তায় তিনিও মুম্বাইতে উঠে এসেছিলেন। প্রথমে তিনি মুম্বাইয়ের নাগদেবের নারায়ণ ধ্রুব স্ট্রিটে একটি বল-বিয়ারিং দোকানে মাসিক ৩০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন।
সেইসময় জয়েশ কান্দিভালির একটি ছোট ঘরে প্রতি মাসে ৬-৭ জন রুমমেট নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ৩০ টাকার বিনিময়ে খাওয়ার পেতেন। সেখানে তাকে মেঝেতে ঘুমাতে হতো। কোনোক্রমে ৬ মাস কাটানোর পর জয়েশের মনে হলো আবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা। জয়েশ ১৯৮৯ সালে গ্রামে ফিরে আসেন এবং বাবার দোকানে কাজ শুরু করেন। প্রায় ৬ বছর ধরে তেল এবং সাবান বিক্রি করার পরে, জয়েশ বুঝতে পেরেছিলেন যে তার একটি ভাড়ার দোকান চালানো এবং দামি গাড়ি কেনার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে।
এইসময় তার এক বাল্যবন্ধু তার গ্রামে এসেছিল। সে সুরাটে হীরার ব্যবসা করে এবং দালালের কাজ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। তিনি তাকে সুরাটে গিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন। আর বেশি না ভেবে ৫০০ টাকা নিয়ে সুরাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন জয়েশ। যখন তিনি সুরাটে পৌঁছান, তখন তার পকেটে মাত্র ৪১০ টাকা বাকি ছিল। এক বন্ধুর সুপারিশে এক হিরে ব্যবসায়ীর কাছে কয়েক মাস কাজ করেন তিনি। এরপর এক বন্ধুর সহযোগিতায় ওয়াচাহার রোডে দোকান ভাড়া নিয়ে তেলের ব্যবসা শুরু করেন।
পাবদির কাছে ধাসায় একটি তেলকল থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধার করে তেল নিয়ে দোকান শুরু করেন। পরে জয়েশের বাবা এই কাজের কথা জানতে পারলে তিনি নিজেই তাকে তেল পাঠাতেন এবং জয়েশ তা বিক্রি করে টাকা বাবার কাছে ফেরত পাঠাতেন। এই কাজ করে তিনি প্রথমমাসেই ১০,০০০ টাকা লাভ করেন৷ তারপর ক্রমে ক্রমে প্রথম বছরেই ৫ লাখ টাকা লাভ করেন জয়েশ। এই লাভের বহর দেখে কামারেজে একটি ছোট শেডের মধ্যে দুটি ট্যাঙ্ক দিয়ে নিজের ব্র্যান্ড রাজহাঁস অয়েল ব্র্যান্ডের ভিত্তি স্থাপন করেন জয়েশ। প্রথমে তারা ফিল্টার করা চিনাবাদাম ও তুলা বীজের তেল ব্যবহার করতেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রে তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন এবং তার কোম্পানি শীর্ষ পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়।
এই সাফল্য অর্জনের পর, তিনি খাওয়ারের ব্যবসায় সাফল্য লাভের চেষ্টা করলেন এবং ১৯৯৯ সালে একটি টেক্সটাইল মিল অধিগ্রহণ করেন। এভাবে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে দেশের সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজনে পরিণত হন জয়েশ। তিনি বিশুদ্ধ নিরামিষ পরিবার থেকে এসেছেন। এত উন্নতি করার পরে তিনি শিরডি, বৈষ্ণো দেবী এবং তিরুপতিতে তিনটি বিশুদ্ধ পাঁচতারা নিরামিষ রেস্তোরাঁও চালু করেছেন। সম্প্রতি, তিনি ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্যাডবেরি এবং নেসলের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চকলেট ব্যবসাতেও সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আজ জয়েশের রাজহাঁস গ্রুপের বার্ষিক লাভ ৩০০০ কোটি টাকার উপরে। এই ধরনের অগ্রগতির জন্য, দৃঢ় উদ্দেশ্য এবং নিষ্ঠা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন জয়েশ।