বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েই চলেছে। একদিকে বাংলায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসতে মরিয়া বিজেপি। আরেকদিকে, নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করে চলেছে শাসক দল তৃণমূল (All India Trinamool Congress)। কিন্তু তাদের মাথা ব্যাথার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বহু আগেই মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন তিনি, এরপর বিধায়ক পদ! সর্বশেষে তৃণমূলের সদস্যতা।
যদিও ওনার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা স্বীকার করেন নি বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইস্তফাপত্রে ভুল থাকার কারণে এটা স্বীকার করার সম্ভব নয়। এমনকি তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে তলবও করেছেন। যদিও এই নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না শুভেন্দু বাবু।
আরেকদিকে, আজ অমিত শাহের হাত ধরে মেদিনীপুরের সভা থেকে ওনার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা। উনি দল থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর রাজ্য জুড়ে তৃণমূল নেতাদের বিশেষ করে দাদার অনুগামীদের মধ্যে দল ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। তবে একমাত্র পাণ্ডবেশ্বরের মেয়র দল ত্যাগ করে আবারও তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। এছাড়া আর কেউ এখনো তৃণমূলে ফিরে যাননি।
শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগের পর এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান পদে থাকা তৃণমূল নেতা অবসরপ্রাপ্ত র্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী পদত্যাগ করেন। এরপর আসানসোলের দুই কাউন্সিলর অমিত তুলসিয়ান ও অভিজিৎ আচার্য এবং কর্পোরেশনের লিগাল অ্যাডভাইজার রবিউল ইসলামও পদত্যাগ করেন। এরপর বাঁকুড়ায় তৃণমূলের সহ-সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও দল ছাড়েন। ওনার সাথে দল ছাড়েন বাঁকুড়ার ১২ জন তৃণমূল নেতা। ওই ১২ জনের মধ্যে ১১ জনই কাউন্সিলর।
গতকাল সকালে শুভেন্দু অধিকারীর পথ অনুসরণ করে পদত্যাগ করে ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। এছাড়াও, পুরুলিয়া জেলায় দলের সাধারণ সম্পাদক তথা রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ও তৃণমূল ছেড়েছেন। ডানকুনি তৃণমূলের নেতা তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ও দলের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলামও হাওয়ায় পাল তুলে দিয়ে দল ছাড়েন।
অনুব্রত মণ্ডলের দুর্গও বাদ যায়নি এই ভাঙন থেকে। সেখানে পদত্যাগ করেন সিউড়ি ১ নম্বর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণী কর্মাধ্যক্ষ করম হোসেন খান। মেদিনীপুর পুরসভার দুবারের চেয়ারম্যান প্রণব বসুও তৃণমূল ছেড়েছেন। পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু আচার্যও দলত্যাগী হয়েছেন।
গতকাল তৃণমূলের সাথে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের শিক্ষা, তথ্য-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টার। এছাড়াও দাদার অনুগামী হিসেবে পরিচিত কাঁথি উত্তর বিধানসভার বিধায়ক বনশ্রী মাইতি গতকাল তৃণমূলের সদস্যতা পদ ছেড়েছেন।
বিধানসভা ভোটের আগে এভাবে দলে ভাঙন ধরায় বিপাকে তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও নেতাদের দলত্যাগ নিয়ে পাত্তা দিচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, নেতারা নয়, দলের কর্মীরাই দলের সম্পদ।