শ্বশুর বাড়িতে এসে বদলে যায় নাম, ছাড়তে হয় অভিনয়! “গল্প হলেও সত্যিই” কৃষ্ণা দেবীর জীবন গল্পের মতই!

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনে অনেক সময় এমন অনেক বাঁধা, পারিবারিক চাপ আসে যে, অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেও দমিয়ে দিতে হয়। হার মানতে হয় নিজের স্বপ্নের কাছেও। আর ঠিক এইভাবেই নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিলেন অভিনেত্রী (Actress) মন্দিরা চৌধুরী ওরফে কৃষ্ণা। মনে আছে সেই কৃষ্ণা কে? ইনি আর কেউ নন ‘গল্প হলেও সত্যি’ সিনেমার অন্যতম মুখ কৃষ্ণা। অনেকেই হয়তো এনাকে ভুলে গেছেন। গুটি কয়েক সিনেমা করেই সকলের নজর কেড়েছিলেন তিনি। তবে আজ রূপালী পর্দার জগতে ব্রাত্য অভিনেত্রী কৃষ্ণা দেবী। বদলেছে নাম বদলেছে জীবন। ঠিক কি ঘটেছে অভিনেত্রীর সাথে।

অভিনেত্রী (Actress) কৃষ্ণা থেকে এখন তিনি মন্দিরা চৌধুরী:

কথা হচ্ছে ১৯৬৬ সালের, ১৩ই অক্টোবর। রুপোলি পর্দায় মুক্তি পেয়েছে, তপন সিনহার ‘গল্প হলেও সত্যি’। রবি ঘোষ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, তপন ভট্টাচার্য, যোগেশ চট্টোপাধ্যায়, ছায়া দেবীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের হাত ধরে এই সিনেমা এক আলাদাই সফলতা পায়। তবে এই কালজয়ী সিনেমায় আরো একটি চরিত্র দর্শকদের অভিভূত করে। চরিত্রের নাম কৃষ্ণা। এই ছবিতে কৃষ্ণা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী (Actress) কৃষ্ণা বসু। এটিই ছিল অভিনেত্রীর শেষ সিনেমা। সম্প্রতি এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে এ বিষয়ে জানান।

 Galpo Holeo Satti's actress Mandira Chowdhury aka Krishna's Life storyকৃষ্ণাদেবীর অভিনয় জগতে প্রবেশ: সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, অভিনেত্রীর (Actress) ৮ বছর বয়সে অভিনয় জগতে প্রবেশ। তিনি জানান, বাবার হাত ধরেই সিনেমা জগতে আসা। প্রথম ছবি “মানময়ী গার্লস স্কুল”। যেখানে অভিনয় করেছেন মহানায়ক উত্তম কুমার। কৃষ্ণা দেবী বলেন তার বাবার শখ ছিল অভিনয় করার, কিন্তু দাদুর বিরোধ থাকায় বাবা অভিনয় করতে পারেননি। তাই বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে হলে মেয়েকে দিয়েই সেই স্বপ্ন পূরণ করাবো। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করাতেই অভিনয় জগতে প্রবেশ কৃষ্ণা দেবীর। তবে একসময় বাধ্য হয়েই সিনেমা জগত থেকে ফিরে আসতে হয় তাঁকে।

কৃষ্ণা থেকে মন্দিরা চৌধুরী হয়ে ওঠার গল্প: সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানা যায়, তপন সিনহার কালজয়ী সিনেমা গল্প হলেও সত্যিতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন কৃষ্ণা দেবী। কিন্তু তারপরেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ি থেকে কেউই চেয়েছিলেন না তিনি যেন সিনেমা করুন। সেই সিদ্ধান্তও তিনি মেনে নেন। তবে বিয়ের পর শুধু জীবনই বদলাইনি একসাথে বদলে গিয়েছিল তাঁর নামও। অভিনেত্রী (Actress) জানান, “যে বিয়ের কার্ড ছাপা হয়েছিল তাতেও আসল নাম ছিল না, কৃষ্ণার বদলে মন্দিরা নামেই কার্ড ছাপানো হয়। প্রথম প্রথম এই নামে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে খুব অসুবিধা হতো। হঠাৎ কেউ মন্দিরা বলে ডাকলে ভাবতাম অন্য কাউকে ডাকছে, আমাকে না।” আর এইভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন কৃষ্ণা থেকে মন্দিরা চৌধুরী।

আরও পড়ুনঃ পুষ্পা জ্বরে কাবু মুকেশ খান্নাও! ‘শক্তিমান চরিত্রের জন্য…’, আল্লুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ অভিনেতা

এমনকি তিনি জানান এই সময় প্রতিবাদ করার কোন চল ছিল না। আর যেহেতু বাঙালি পরিবারের কন্যা তখন তো বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী সকলে। শশুর বাড়িকে চটানো যাবে না, শ্বশুর বাড়ির সাথে ঝামেলা করা যাবে না এমনই সব ধারণার চল ছিল। তাই এই নাম বদলানোর বিরুদ্ধে অভিনেত্রীর বাপের বাড়ির কেউই প্রতিবাদ করেনি। যদিও কথাটি কোন ভুল বলেননি তিনি, বর্তমান সময়ও মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে নির্বাক শ্রোতা হিসেবেই কাজ করতে হয়। সে যাই হোক তবে নাম বদলানোর ফলে বিভিন্ন রকমের সমস্যাতে পড়তে হয় অভিনেত্রীকে (Actress)।

আরও পড়ুনঃ “এই লড়াইটা আমরা লড়ব….” নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা শুভেন্দু অধিকারীর!

কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিয়ের পরও বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পেয়েছিলেন অভিনেত্রী (Actress)। আর এ কথা তিনি জানতে পারেন তার বাবার কাছ থেকেই। মন্দিরা ওরফে কৃষ্ণা দেবী জানান, “গল্প হলেও সত্যি” শেষ সিনেমা করার পর রাজ কাপুরের প্রোডাকশন হাউস থেকেও তার ডাক আসে। পাশাপাশি আরও বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় সেই সময় সুযোগ পান অভিনয় করার জন্য। কিন্তু নতুন জগতে প্রবেশ করার পর আর তিনি এই বিষয়ে ভেবে দেখেননি। তবে তিনি বলেছেন, এখন যদি সিরিয়াল ওটিটি সিনেমা কোথাও সুযোগ আসে, তাহলে তিনি কাজ করতে রাজি। এই হল অভিনেত্রী মন্দিরা চৌধুরী ওরফে কৃষ্ণা দেবীর গল্প।

Sunanda Manna
Sunanda Manna

সুনন্দা মান্না, বাংলা হান্টের স্ক্রিপ্ট রাইটার। গুরুদাস কলেজ থেকে সাংবাদিকতা করার পর থেকেই সংবাদ মাধ্যমে কাজ শুরু। দেশ থেকে বিদেশ, রাজনীতি, বিনোদন বিভিন্ন তথ্যই আপনাদের কাছে তুলে দেওয়া আমার মূল লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর