বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার একটি তীব্র চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনল জাতিসংঘ (United Nations)। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেছেন যে, হিমালয়ের প্রধান নদীগুলি অর্থাৎ সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর খুব দ্রুত কমতে চলেছে। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৭০ থেকে ২৪০ কোটি শহুরে মানুষ তীব্র জলের সঙ্কটে পড়বেন। এর কারণ হল তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়া।
আন্তোনিও জানান, হিমবাহ পৃথিবীর জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিশ্বের ১০ শতাংশ এলাকায় হিমবাহ রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সেগুলি দ্রুত গলে যাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকায় প্রতি বছর ১৫ বিলিয়ন টন বরফ গলছে। এদিকে, গ্রিনল্যান্ড প্রতি বছর ২৭ বিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে। এরপরেই সবচেয়ে বেশি হিমবাহ রয়েছে হিমালয়ের উপরে। সেগুলিও এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এশিয়ায় হিমালয় থেকে উৎপন্ন ১০ টি প্রধান নদী রয়েছে। যেগুলি আপাতত ১৩০ কোটি মানুষকে পানীয় জলের জোগান দিচ্ছে। এদিকে, এই প্রাকৃতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রবাহ ও জলস্তরের ওপর। এছাড়াও, হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার ফলে পাকিস্তান ও চিনে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় হিমালয় অঞ্চলে ৯,৫৭৫ টি হিমবাহ রয়েছে। যার মধ্যে ৯৬৮ টি হিমবাহ রয়েছে শুধুমাত্র উত্তরাখণ্ডে। এদিকে, গঙ্গা, ঘাঘরা, মন্দাকিনী, সরস্বতীর মত গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলি সমতলভূমিতে জলের জোগান দিচ্ছে। তবে, এই নদীগুলির জলস্তরও কমবে। কারণ যে হিমবাহগুলির জল থেকে নদীগুলি পুষ্ট সেগুলি গলে যাচ্ছে।
নেচার জার্নালের গবেষণাটিও আশঙ্কা তৈরি করেছে: লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা হিমালয়ের ১৪,৭৯৮ টি হিমবাহকে স্টাডি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ৪০০ থেকে ৭০০ বছর আগে হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়ার হার খুবই কম ছিল। কিন্তু গত কয়েক দশকে, ১০ গুণ বেশি গতিতে বরফ গলে যাচ্ছে। এই গবেষণাটি ২০ ডিসেম্বর ২০২১-এ নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।
ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও সিন্ধু নদী বিপদের মধ্যে রয়েছে: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিকার পরে হিমালয়ে হিমবাহের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এজন্য একে তৃতীয় মেরুও বলা হয়। তবে, হিমালয়ের হিমবাহগুলি যে গতিতে গলে যাচ্ছে তার ফলে ভবিষ্যতে এশিয়ার একাধিক দেশে পানীয় জলের ঘাটতি দেখা যাবে। এমনকি, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু ও গঙ্গার মতো বড় নদীতেও জলের সঙ্কট পরিলক্ষিত হবে। মূলত, নেপালে হিমালয়ের হিমবাহ সবচেয়ে বেশি পরিমানে গলে যাচ্ছে।
এর পেছনে প্রধান কারণ হল হিমালয় পর্বতের দুই অংশের পরিবেশ, বায়ুমণ্ডল ও আবহাওয়ার পার্থক্য। এদিকে, হিমবাহ শুধুমাত্র অতি উচ্চতাবিশিষ্ট এলাকাতেই গলছে না। বরং, তারা যেখানে হ্রদ তৈরি করে সেখানেও গলে যাচ্ছে। কারণ ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে হ্রদের জল দ্রুত বাষ্পীভূত হচ্ছে। এদিকে, হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার কারণে আবার অনেক হ্রদও তৈরি হয়েছে। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই লেকের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেলে কেদারনাথ ও রেইনি গ্রামের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।