বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: একটি যুগের অবসান। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিলেন ফ্রান্সকে (France) বিশ্বকাপ জেতানো গোলরক্ষক এবং অধিনায়ক হুগো লরিস (Hugo Lloris)। ২০১৮ সালের রাশিয়ায় তার অধিনায়কত্বেই বিশ্বকাপ (Russia World Cup 2018) দ্বিতীয়বারের মতো ঘরে তুলতে পেরেছিল দিদিয়ের দেশঁ-র ফ্রান্স। গতবছর কাতার বিশ্বকাপেও (Qatar World Cup 2022) তার নেতৃত্বেই ফাইনাল অবধি পৌঁছেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পেরা। দেশের জার্সিতে ২০০৮ সালে অভিষেকের পর মোট ১৪৫ টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে অধিনায়ক হিসেবেই খেলেছেন ১২১টি ম্যাচ। ২০১৮ সালের আগে ২০১০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপেও তিনি ফ্রান্সের নেতৃত্বের দায়িত্বে ছিলেন। তার অধিনায়কত্বে ফ্রান্স তিনটি ইউরো কাপ (European Championship) এবং তিনটি নেশন্স লিগও (Nations League) খেলেছে।
তবে দেশের জার্সিতে অবসর নিলেও নিজের ক্লাব টট্যেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিনি বিশ্বকাপ জিতলেও নিজের এই ক্লাবের হয়ে এখনো অবধি কিছুই জিততে পারেননি তিনি। এর আগে ফ্রান্সে লিয়ন এবং নাইসের মতো ক্লাবের হয়ে খেলে এসেছিলেন তিনি। সেখানে অবশ্য ফরাসি লিগ জেতার খেতাব রয়েছে তার ঝুলিতে।
কাল অবশ্য তিনি একা নন, ফুটবল জগতের আরো এক মহাতারকা ফুটবলকে পুরোপুরি বিদায় জানিয়েছেন। সেই মহতারকা হলেন হুগো লরিসেরই একসময়ের ক্লাব সতীর্থ, ওয়েলস (Wales) অধিনায়ক গ্যারেথ বেল (Gareth Bale)। আন্তর্জাতিক এবং ক্লাব দুই পর্যায়েই ফুটবলকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছেন ‘ওয়েলস উইজার্ড’ নামে খ্যাত উইঙ্গার।
সাউদাম্পটনের হয়ে সিনিয়র পর্যায়ের ক্লাব ফুটবল খেলা শুরু করা এবং তারপর ২০০৭ সালে টট্যেনহ্যাম হটস্পারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময়টা গ্যারেথ বেল ছিলেন একজন লেফট উইং ব্যাক। কিন্তু তার মারাত্মক গতি, পায়ে গোলার মতো শট, বিপক্ষ দলের ফুটবলার ড্রিবলিংয়ের মাধ্যমে নাকানি চোবানি খাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেখে তাকে পরবর্তীতে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলানো শুরু হয়। স্পার্সের হয়ে কোনও ট্রফি জিততে না পারলেও তার দুরন্ত ফুটবল দেখে তাকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।
রিয়াল মাদ্রিদের বেনজেমা এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো মহাতারকার সঙ্গে তার জুটি জমে ওঠে এবং তারা ‘BBC’ (বেল-বেনজেমা-ক্রিশ্চিয়ানো) ত্রয়ী নামে ফুটবলের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। এই বিবিসির শাসনকালে রিয়াল মাদ্রিদ ৫ বছরে ৪ টি ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যেতে। রিয়াল মাদ্রিদকে প্রথম বছরেই কোপা দেল রে জেতাতেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বেল। কে ভুলতে পারে ২০১৩/১৪ মরশুমের কোপা ফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর চোটের জন্য বাইরে থাকার কারণে চাপে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গ্যারেথ বেলের মাঝমাঠে থেকে টানা স্প্রিন্টে করা দুরন্ত গোল।
তবে ২০১৮-তে ক্রিশ্চিয়ানোর রিয়াল ছেড়ে চলে যাওয়া এবং তারপর একাধিকবার চোট আঘাতে ভুগে সাদা জার্সিতে বেলের শেষটা ঠিক রূপকথার মতো হয়নি। মাঝে এক মরশুমের জন্য লোনে ফিরেছিলেন নিজের পুরনো ক্লাব টট্যেনহ্যামে। তারপর চলে গিয়েছিলেন এমএলএসে ‘লস এঞ্জেলস এফসি’-র হয়ে খেলতে। দেশের জার্সিতেও তার অবদান অপরিসীম। ওয়েলসকে ৪০ বছর পর ইউরো কাপ এবং ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। দেশের জার্সিতে ১০৮ টি ম্যাচ খেলে ৪১ গোল করে তিনিই ওয়েলসের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ক্লাব ফুটবলে ৫৩৯ ম্যাচে ১৮৬ গোল রয়েছে তার।