বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০১৮ সালে নবান্নের তরফ থেকে রাজ্যের (Government of West Bengal) সকল দফতরের ‘গ্রুপ এ’ অফিসারদের প্রত্যেক আর্থিক বছরের শেষে নিজের কাজের মূল্যায়ন তথা সেলফ অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় ৬ বছর। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যের বহু বড় কর্তা সেই নিয়ম মানছেন না বলে খবর। মূল্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসারের সম্পত্তির হিসেবও জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এই নিয়ে অর্থ দফতরের তরফ থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও, অনেকে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না বলে জানা যাচ্ছে।
গত বছর মে মাস নাগাদ অর্থ দফতরের তরফ থেকে চিঠি পাওয়ার পর রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ‘গ্রুপ এ’ লেভেলের কর্তাদের বকেয়া বছরগুলির মূল্যায়ন জমা করার নির্দেশ দিয়েছিল। যদি নিয়ম না মানা হয় তাহলে প্রোমোশন (Promotion) সহ অন্যান্য নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে একথাও বলা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বহু কর্তা এখনও এই নিয়ম মানেননি।
এদিকে ২০১৮ সালে নবান্নের (Nabanna) তরফ থেকে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, একজন অফিসারের সেলফ অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্টে (Self Appraisal Report) তিনি কতদিন কাজ করেছেন, কতদিন ছুটি নিয়েছেন, কতদিন দেরি করে অফিসে ঢুকেছেন, সেই কারণে তাঁর কত ছুটি কাটা গিয়েছে সেসব কিছুর উল্লেখ করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি কী ধরণের কাজ করেছেন, সময়ের মধ্যে সেই কাজ শেষ করেছেন কিনা ও অতিরিক্ত কোনও দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা সেটার উল্লেখও থাকতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসারের সম্পত্তির হিসেবও জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ফের ধাক্কা খেল স্কুল শিক্ষা দফতর! রাজ্যের শিক্ষকদের নিয়ে বিরাট রায় হাইকোর্টের
একইসঙ্গে নবান্নের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, কোনও কর্তা যদি একটা আর্থিক বছরের গোটাটাই ছুটিতে থাকেন কিংবা কোনও অফিসার যদি ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’ অথবা ‘সাসপেন্ডেড’ হয়ে থাকেন বা কোনও কর্তা যদি আর্থিক বছর শেষে হওয়ার তিন মাসের মধ্যে কাজে যোগ দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে মূল্যায়ন না জমা দিলেও চলবে। রাজ্য প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সচিব থেকে শুরু করে বিডিও অবধি, যে কোনও ক্যাডারের আমলাদের প্রত্যেক বছর এই মূল্যায়ন জমা দেওয়ার কথা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গত ২১ মে স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে অবশ্য এই বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করা হয়। সেখানে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ অবধি যারা এই মূল্যায়ন জমাকরেননি তাঁদের কার্যত সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি বলা হয়, আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা জানাচ্ছেন, রিপোর্ট জমা দেননি মানেই যে অফিসারেরা ঠিকভাবে কাজ করেননি তা নয়। অনেকেই হয়তো এই বিষয়ে ততটা খেয়াল করেননি। অনেকে হয়তো আবার ভুল করে জমা দেননি।
যদিও প্রশাসনের একাংশের কথায়, ওই মূল্যায়ন না জমা দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ‘অন্য কারণ’। বলা হচ্ছে, সরকারি অফিসারদের একটি অংশ প্রোমোশন চান না। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে একটি পদেই থেকে যেতে চান। সেই কারণে ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ায় অনীহা তাঁদের। স্বাস্থ্য দফতর শুধু নয়, রাজ্যের অন্যান্য নানান ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে বলে খবর। তবে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মূল্যায়নের ওপর নিজে নজরদারি করার কথা ঠিক করেছেন বলে খবর। নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, আমলাদের বার্ষিক মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়ার আগে মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকাকে তাঁকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।