বাংলাহান্ট ডেস্ক: রাজধানী দিল্লির একটি বদনাম রয়েছে। দিল্লি নাকি বায়ুদূষণের শহর। সম্প্রতি দিল্লির আকাশে দূষণের একটি চাদর লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে শুধু দিল্লিকেই দোষ দিয়ে লাভ নেই। বায়ুদূষণ দেশের প্রত্যেকটি মেট্রো শহরেই রয়েছে। এই অবস্থায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরবাসীকে গণপরিবহণ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে দিল্লিতে মানুষ একেবারেই গণপরিবহণ ব্যবহার করতে নারাজ। তাঁরা হয় নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করছেন নয়তো ক্যাব ব্যবহার করছেন।
এতে যেমন বৃদ্ধি পায় বায়ুদূষণের মাত্রা, তেমনই রাস্তায় যানজটও লেগে থাকে। কিন্তু শহরবাসীর গণপরিবহণ ব্যবহার করতে অনীহা কেন? সম্প্রতি এর উপর একটি সমীক্ষা (Government Survey on transport) চালিয়েছে সরকার। তাতে জানা গিয়েছে, দিল্লিতে গণপরিবহণ পরিষেবার অনিশ্চয়তা, পরিবহণের জন্য অনেক বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা, সফরে দেরী হওয়া, বাসে অমানুষিক ভিড় এবং একাধিক বাস স্টপ হওয়ার ফলে শহরবাসী এগুলি ব্যবহার করতে চান না। দেশের ৪৬টি শহরে ২ লক্ষ মানুষের উপর এই সমীক্ষা চালিয়েছিল আবাসন মন্ত্রালয়।
সমীক্ষা অনুসারে, ৬৪ শতাংশ মানুষ গণপরিবহণের ভরসা করেন না। পাশাপাশি, ৬৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, বাস ও বাস স্টপে অমানুষিক ভিড় হয়। তাই তাঁরা এগুলি ব্যবহার করেন না। এই সমীক্ষায় ১৫ হাজারেরও বেশি বাস চালক ও কন্ডাক্টরদের ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা যানজট, অটো রিকশা এবং বাস থামবার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা অটো রিকশা নিয়ে নাজেহাল। মন্ত্রক সূত্রে খবর, এটিই হল গণপরিবহন নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমীক্ষা।
‘স্মার্ট সিটি মিশনের’ অন্তর্বর্তী ‘সকলের জন্য পরিবহন চ্যালেঞ্জের’ অধীনে গণপরিবহনের সমস্যাগুলি জানার জন্য এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। গণপরিবহন নিয়ে সমস্যা জানার জন্য এটিই প্রথম পদক্ষেপ। বাসের ঘাটতি, বাসের সময় নির্ধারণ করার সমস্যা, ভুল রুটে বাস চালানো এবং বাসের মাধ্যমে ঠিকঠাক যোগাযোগ না থাকার মতো কয়েকটি গভীর সমস্যা উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
এছাড়াও দেখা গিয়েছে, বর্তমানে বহু মানুষ বাস রুট এবং টাইম টেবিল সম্পর্কে অনলাইনে জানতে ইচ্ছুক। মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সরকার ইতিমধ্যেই গণপরিবহনকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ভাগে স্টার্ট আপগুলি নিজেদের নথিভুক্ত করাতে পারে। ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’ পোর্টালে গিয়ে তারা নিজেদের ধারণাগুলির প্রস্তাব দিতে পারে। আবাসন মন্ত্রক সূত্রে খবর, যাত্রীদের এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সেই জন্য আরও বেশি গণপরিবহন রাস্তায় নামাতে হবে।
যাত্রীদের সুবিধার্থে কিছু শহর দিয়ে এর সমাধান শুরু করা হবে। এছাড়াও স্টার্ট আপগুলিকে সমাধান খুঁজতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সমীক্ষা অনুসারে, ৫৩ শতাংশ মানুষ সফর করার সময় নগদ টাকা দিতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে, ৫৪ শতাংশ মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা দিতে পছন্দ করছেন। যদিও অটো রিকশা বা ক্যাবের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ যাত্রীই নগদ লেনদেন পছন্দ করছেন।
বাস চালক ও কন্ডাক্টররাও বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। যেমন কাজ করতে করতে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন তাঁরা। প্রায় ৪০ শতাংশ বাস চালক জানিয়েছেন খারাপ আবহাওয়া, নিয়মিত বাসের রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং বাসের খারাপ হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না। এছাড়াও বাস ডিপোতে ডিউটির জন্য অনেক বেশিক্ষণ অপেক্ষা এবং অনিয়মিত কাজের সময় ও কম বিরতির ফলেও কাজ করতে অসুবিধার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।