বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Vote) নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে অশান্তির ঘটনা। পরিস্থিতি এতটাই বেলাগাম যে মনোনয়ন পর্বেই প্রাণ হারিয়েছে একাধিক। এই আবহে রাজ্যে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা (Article 355, Article 356) জারি করার মতো পরিস্থিতি আছে কি না, সেই বিষয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে (CV Ananda Bose) প্রশ্ন করা হলেও সরাসরি কোনও মতামত প্রকাশ করলেন না তিনি।
সিভি বোস বলেন সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না তিনি। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে সরাসরি জবাব এড়িয়ে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারার প্রশ্নে রাজ্যপাল আসলে কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিচ্ছেন। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে ‘পিস রুম’ (শান্তিকক্ষ) নামক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে রাজভবনে।
আম জনতা ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতেই এই ‘পিস রুম’। তবে এই শান্তিকক্ষ সাময়িক। রাজ্যপাল জানিয়েছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ‘পিস রুম’ বন্ধ হয়ে যাবে। যত দ্রুত এই কাজ হবে ততই খুশি হবেন বলেও মন্তব্য করেন। তার কথায়, ‘‘এই রুম এক দিনেই বন্ধ হয়ে যাক, আমি চাইব! পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকলে, অভিযোগ না থাকলে পিস রুমেরও দরকার থাকবে না। ”
রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে মাত্র এক দিনেই ‘পিস রুমে’ তিনশোর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। রাজ্যপালের কথায়, রাজ্যের ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা, সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। যা তথ্য উঠে আসছে, সেই মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন-সহ ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’কে জানানো হচ্ছে। বাংলায় হিংসা যে বাস্তবে ঘটছে সেই মন্তব্যও করেন বোস।
তার কথায়, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে বয়ান আসছে তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, হিংসা বাস্তবে ঘটছে। এরপরই রাজ্যপাল বলেন, ‘‘ছাঁকনিতে ফেলা (ফিলটার্ড) সরেজমিনে তথ্য আমি চাই না। প্রত্যক্ষ ভাবে খবর নেব। তার জন্য যেখানে প্রয়োজন হবে, যাব।’’
হঠাৎ রাজ্যে পিস রুম খোলার কী প্রয়োজনীয়তা সেই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘‘বাংলার কিছু জায়গায় দুষ্কৃতীরা ওয়ার রুম খুলেছে! তাই এখানে পিস রুম খোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকবেন, নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন— এমনটাই হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষ ও সরকারের সেতু হবে এই পিস রুম।’’
প্রসঙ্গত, এই পিস রুম নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। হঠাৎ রাজ্যপালের এই উদ্যোগ ও ভূমিকা একেবারেই ‘এক্তিয়ার বহির্ভূত’ বলে কড়া সমালোচনা জুড়েছে শাসকদল। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মতে, ‘‘রাজ্য রাজনীতিতে বামফ্রন্টের এক জন চেয়ারম্যান আছে জানতাম। এখন দেখছি, রামফ্রন্টের এক জন চেয়ারম্যান হয়েছেন!”
অন্যদিকে সিপিএমও রাজ্যপালের এই পদক্ষেপকে ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছে। যদিও বোসের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তবে কোনও দলের সমালোচনাতে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতে চাইছেন না রাজ্যপাল। তার কথায়, ‘‘রাজ্যপাল শপথ নেন সংবিধান বাঁচানো এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। মানুষের পক্ষেই সব সময় থাকব। যত দিন দায়িত্বে আছি, সাধারণ মানুষ ও আইনের শাসনের প্রতিই আমার পক্ষপাত থাকবে।’’