বাংলাহান্ট ডেস্ক : হাঁসখালি ধর্ষণ কাণ্ড এবং নির্যাতিতার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে এবার পথে নামল বিজেপি। ঘটনার প্রতিবাদে হাঁসখালিতে ১২ ঘন্টার বনধ ডাকল তারা। এদিন সকাল থেকেই কার্যত শুনশান হাঁসখালির রাস্তাঘাট। পথে মানুষজনও অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম।
সোমবার হাঁসখালি এলাকায় একাধিক কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে গেরুয়া শিবির। বনধের পাশাপাশি এদিনই বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রতিনিধি দল নিহত ওই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবে। ওই প্রতিনিধি দলে থাকছেন এলাকার বিধায়ক আশিস বিশ্বাসও। রাজ্যের নারী নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে পুলিশকে একটি স্মারকলিপিও দেবেন তাঁরা। উল্লেখ্য, এদিনই হাঁসখালিতে যাচ্ছে বামেদের একটি মহিলা প্রতিনিধি দলও। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই ধর্ষণ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ব্রজগোপাল গোয়ালাকে। স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলে সে। গত সোমবার অভিযুক্তের জন্মদিনের পার্টিতে নেমন্তন্ন করার নাম করে বাড়ি থেকে বিকেল চারটে নাগাদ বের করে নিয়ে যাওয়া হয় নাবালিকাকে। তারপর সেই পার্টিতেই ধর্ষণ করা হয় তাকে। তৃণমূল নেতার ছেলে ও তার বন্ধুরা নাবালিকাকে লাগাতার ধর্ষণ করে বলেই অভিযোগ। এরপর সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাড়িতে দিয়ে যান এক মহিলা। ততক্ষণে মারাত্মক রকম অসুস্থ হয়ে পড়েছে মেয়েটি। ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের ফলে তলপেটের ব্যথায় তখন সে একপ্রকার অচৈতন্য। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে সোমবার রাতেই মৃত্যু হয় ওই নাবালিকার।
নাবালিকার মৃত্যুর পরই হঠাৎ করে বাড়িতে এসে হাজির হয় কয়েকজন যুবক। পরিবারকে সাহায্য করার নাম করে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই তড়িঘড়ি দেহ শ্মশানে নিয়ে যায় তারা। রাতারাতি দাহ সেরে মুছে ফেলা হয় সবটুকু চিহ্ন। এমনকি বাধা দিলে বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে তারা হুমকিও দেয় নির্যাতিতার পরিবারকে।ওই দাহকার্যে যে শ্মশানকর্মী ছিলেন ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ তিনিও। এলাকায় সন্ধান চালিয়েও তাঁকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। ওই শ্মশানকর্মীর পরিবারের দাবি, তড়িঘড়ি দেহ পুড়িয়ে ফেলতে কেরোসিন তেল ঢেলেই আগুন ধরানো হয়েছিল নাবালিকার চিতায়।
শেষমেশ সাহস করে শনিবার থানায় গিয়ে পুরো বিষয়টির প্রেক্ষিতে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতার বাবা মা। অভিযুক্ত ব্রজগোপালকে এরপর রবিবার সকালে আটক করে জেরা শুরু করে পুলিশ। এরপরই জেরায় তার বক্তব্যে ধরা পড়ে একাধিক অসঙ্গতি। তার জেরেই গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তকে। খুন, ধর্ষণ, তথ্য প্রমাণ লোপাট, খুনের হুমকি প্রভৃতি একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিতা নাবালিকা হওয়ায় মামলা রজু হয়েছে পকসো আইনেও। থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই পলাতক ওই তৃণমূল নেতা। ঘর ছেড়েছেন বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দারাও।