বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যজুড়ে (West Bengal) বন্ধ রয়েছে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে প্রায় বন্ধের মুখে রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি স্কুলগুলি। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এমন অনেক সরকারি স্কুল রয়েছে যেখানে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ঠিক না থাকা,নানা কারণে ছুটি দেওয়া ইত্যাদি কারণে পঠন-পাঠনের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ করেছেন রাজ্যের শিক্ষক-মহলের একাংশ। এবার তাদের সেই বক্তব্যই প্রতিফলিত হয়েছে বেসরকারি সংস্থার একটি শিক্ষার রিপোর্টে।
ভয় ধরাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) প্রাথমিকের রিপোর্ট
বেসরকারি সংস্থার ওই রিপোর্ট বলছে এই রাজ্যে (West Bengal) শিক্ষার মান তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। যা রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে রাজ্যের শিক্ষকমহলে। রিপোর্ট অনুযায়ী চতুর্থ শ্রেণীতে পড়লেও এখনও পর্যন্ত বাংলা অক্ষরজ্ঞান নেই রাজ্যের ৫.২ শতাংশ পড়ুয়ার। রাজ্যে এমন মোট ১৬.৪ শতাংশ পড়ুয়া রয়েছেন যারা অক্ষর পড়তে পারলেও শব্দ পড়তে পারে না। অংকের অবস্থাও খুবই খারাপ। জানলে অবাক হবেন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে অথচ ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা চেনেন না ৪.৪ শতাংশ পড়ুয়া। প্রথম শ্রেণীর ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বেশি অর্থাৎ ১৪.৩ শতাংশ। যদিও রিপোর্ট বলছে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে সরকারি স্কুলের ওপরেই ভরসা রাখছেন রাজ্যের অধিকাংশ অভিভাবক। এদিক দিয়ে বেসরকারি স্কুল গুলি অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
মঙ্গলবারই প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট, রুরাল’ (এএসইআর)। বহু বছর ধরে এই সংস্থা শিক্ষার বিষয়ে সমীক্ষা করছে। সারা দেশে মোট ১৯টি ভাষায় প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের গ্রামীণ এলাকার ৫ থেকে ১৬ বছরের পড়ুয়াদের নিয়ে এই সমীক্ষা চালিয়েছে তারা। সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে সমীক্ষা হয়েছে। শিক্ষার মান থেকে স্কুলের পরিকাঠামো কেমন? কী কী সুবিধা রয়েছে? সবই উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
রিপোর্ট দেখে শিক্ষকরা জানাচ্ছেন ২০২২ সালে সরকারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর মাত্র ৩২.৬ শতাংশ পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্য বই পড়তে পারত। কিন্তু ২০২৪ সালের রিপোর্ট বলছে ৩৪ শতাংশ তৃতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ের নির্বাচিত অংশ পড়তে পারে। শুধু তাই নয় রিপোর্টে উঠে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালে তৃতীয় শ্রেণীর মাত্র ৩২.৪ শতাংশ পড়ুয়া বিয়োগের অংক করতে পারত ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৭. ৫ শতাংশ।
শিক্ষা সংক্রান্ত ওই রিপোর্ট বলছে পঞ্চম শ্রেণির মাত্র ৩৪.৩ শতাংশ এবং অষ্টম শ্রেণির ৩৩.৫ শতাংশ পড়ুয়ারা ভাগ অঙ্ক করতে পারে। প্রসঙ্গত ২০২২ সালে সমীক্ষার আগের বছরগুলিতে করোনার জন্য অধিকাংশ স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। তখন যুক্তি ছিল করোনার জন্য স্কুল বন্ধ থাকার কারণে পড়াশোনার মান পড়েছে। কিন্তু দু’বছর হয়ে গেল স্কুল খুলেছে পুরোদমে। কিন্তু এখনও সেই ছবিতে তেমন কোন বদল আসেনি। শিক্ষকদের একাংশের মতে করোনার পর থেকে রাজ্যের (West Bengal) পড়াশোনার মান এবং পরিকাঠামোর কিছুটা উন্নতি হয়েছে তা এই সমীক্ষাতেই প্রতিফলিত হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের স্মার্টফোনের ব্যবহারের তথ্যও। জানা যাচ্ছে বর্তমানে রাজ্যের (West Bengal) মধ্যে মোট ৮৪.৪ শতাংশ পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন রয়েছে। এই পড়ুয়াদের মধ্যে ৬৬.৬ শতাংশ পড়ুয়া পড়াশোনার কাজে ওই মোবাইল ব্যবহার করতে পারে। তবে কতজন নিরাপদে সেই মোবাইল ব্যবহার করে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে ৪৯.৭ শতাংশ প্রয়োজনে কাউকে ব্লক করতে পারে। তবে ডিজিটাল ক্লাসের ওপর জোর দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৯৫.৩ শতাংশ স্কুলে কম্পিউটার নেই।
আরও পড়ুন: রমজান মাস উপলক্ষ্যে বিশেষ প্যাকেজ! রেশন ডিলারদের জন্য বিরাট নির্দেশ
রিপোর্ট বলছে মিডডে মিলের ছবিটা ভালো। রাজ্যের (West Bengal) মোট ৮৪.৯ শতাংশ পড়ুয়া এই মিড ডে মিলের খাবার পাচ্ছে। তাদের মধ্যে ৭৫.৫ শতাংশ স্কুলে রয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। এরমধ্যে ৮২.৩ শতাংশ স্কুলে আছে শৌচালয়। তবে মোট ১৯.৫ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য শৌচালয় নেই। আলাদা শৌচালয় থাকলেও তা,তালা বন্ধ রাজ্যের মোট ৫.৪ শতাংশ স্কুলে। মেয়েদের জন্য শৌচালয় থাকলেও তা ব্যবহারযোগ্য নয় মোট ৮.৯% স্কুলে। মেয়েদের জন্য ব্যবহারের উপযোগী শৌচালয় রয়েছে রাজ্যের ৬৬.২ শতাংশ স্কুলে।
ভর্তির নিরিখে বেসরকারি স্কুলগুলির তুলনায় সরকার স্কুলগুলি এগিয়েই রয়েছে। রিপোর্ট বলছে, সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে ৬ থেকে ১৪ বছরের ৮৯.৬ শতাংশ পড়ুয়া। বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে ৮% ৮.৭ শতাংশ পড়ুয়া। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির হার অনেক বেশি। ২০১৮ সালে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৭.৪ শতাংশ ছেলে পড়ুয়া ভর্তির হয়েছিল। যা ২০২২ সালে বেড়ে হয় ৯১.৭ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালে সংঘাটা আবার কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬.৪ শতাংশ। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হার ২০১৮ সালে ছিল ৮৮.৭ শতাংশ। যা ২০২২ সালে বেড়ে হয় ৯৩.১ শতাংশ। কিন্তু ২০২৪ সালে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৮৯.৪ শতাংশ।