বাংলা হান্ট ডেস্ক: সকলেই চান ভালো অঙ্কের টাকা রোজগারের মাধ্যমে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে। সেই অনুযায়ী, অনেকেই শুরু করেন কঠিন পরিশ্রমও। তবে, যাঁরা জীবনের প্রথম থেকেই দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে অত্যন্ত কাঠিন্যের সাথে সফলতার এই লড়াইয়ে যোগদান করেন তাঁদের জন্য ওই সফর রীতিমত কন্টকাকীর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ, সফল হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁদের জীবন থাকে প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ।
এমতাবস্থায়, অনেকেই সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে জয় করে পৌঁছে যান তাঁদের লক্ষ্যে। পাশাপাশি, তাঁরা তৈরি করেন অনুপ্রেরণাও। তাই, যাঁরা দারিদ্র্যকে পরাজিত করে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদেরকে অবশ্যই হরিকিশান পিপ্পলের জীবনকাহিনি উদ্বুদ্ধ করবে। উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তি আজ পৌঁছে গিয়েছেন সফলতার শিখরে। এক সময়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হলেও আজ হরিকিশান একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরূপে নিজেকে তৈরি করেছেন।
অল্প বয়সেই কঠোর পরিশ্রম করতে তিনি বাধ্য হন:
যে বাড়িতে হরিকিশান জন্মেছিলেন, সেখানে দু’বেলা রুটি পাওয়াও ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। তাঁর বাবা একটি ছোট জুতো মেরামতের দোকান চালিয়ে কোনোমতে সংসার সামলাতেন। এদিকে, দারিদ্র্যতার ভ্রুকুটি হরিকিশানের জীবনেও সরাসরি প্রভাব ফেলে। এমনকি, তিনি অল্প বয়সেই কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হন।
তবে, পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলেও তিনি তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি বুঝেছিলেন যে, কেবল শিক্ষার মাধ্যমেই দারিদ্র্যকে পরাজিত করা যায়। এভাবেই চলতে চলতে হঠাৎ তাঁর বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবেই, তখন দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি, সংসার চালানোর দায়িত্ব সরাসরি হরিকিশানের কাঁধে এসে পড়ে। এমতাবস্থায় তিনি এক আত্মীয়ের সহায়তায় সাইকেল রিকশা ভাড়া নিয়ে তা চালাতে শুরু করেন। এভাবেই কয়েক মাস এই কাজ করতে থাকেন তিনি।
আগ্রার একটি কারখানায় ৮০ টাকা বেতনে কাজ করেন হরিকিশান:
এদিকে, বাবার মৃত্যুর পর হরিকিশানের বিয়ে দিয়ে দেন তাঁর মা। হরিকিশানের জন্য এটি ছিল একটি কঠিন সময়। এমনকি, সংসার চালাতে তাঁর টাকারও দরকার ছিল। যে কারণে তিনি আগ্রার একটি কারখানায় ৮০ টাকার বেতনে কাজ শুরু করেন। এদিকে, কয়েক বছর পর তিনি সাহসের সাথে ১৯৭৫ সাল নাগাদ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তাঁর পৈতৃক দোকানটি পুনরায় চালু করেন। তবে কিছুদিন পর পারিবারিক কলহের জেরে বাড়ি ছাড়তে হয় তাঁকে। আর এটাই তাঁর জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। হরিকিশান এরপরে জুতো বানানো শুরু করেন।
কঠোর পরিশ্রমে ১০০ কোটি টাকার কোম্পানি গড়ে তুলেছেন তিনি:
তাঁর তৈরি করা জুতো সকলের এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে তিনি রাজ্য ট্রেডিং কর্পোরেশন থেকে ১০,০০০ জোড়া জুতো তৈরির অর্ডার পেয়েছিলেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তিনি হেরিক্সন নামে তাঁর নিজস্ব জুতোর ব্র্যান্ড চালু করেন এবং বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন।
এছাড়াও, ব্যবসা বৃদ্ধির সাথে সাথে তিনি পিপলস এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড নামে নিজের কোম্পানি শুরু করেন। জুতোর ব্যবসায় সাফল্যের পর তিনি রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেও তাতে সফল হন। পাশাপাশি, হরিকিশান স্বাস্থ্যসেবার খাতেও কাজ করেছেন এবং প্রশংসা পেয়েছেন। আর এভাবেই নিজের যোগ্যতা দিয়ে তিনি একাধিক ক্ষেত্রে সাফল্যের কাহিনি তৈরি করেছেন। বর্তমানে তাঁর কোম্পানির টার্নওভার ১০০ কোটি টাকারও বেশি।