বাংলাহান্ট ডেস্কঃ তেলঙ্গানার (Telangana) নিজামবাদে নাভিপেটের বছর ৩৯ -এর নরসিংহ চারি (Narsingh Chari) ছোট থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর মামা ছিলেন পেশায় একজন রেডিও মেকানিক। তবে স্কুলে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়ায় বহু সম্মানে সম্মানিতও হয়েছিলেন। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ থাকায়, তিনি স্কুলের শিক্ষদের পাশাপাশি লাইব্রেরীরও সাহায্য পেতেন।
টিউব লাইটের বিষয়ে ভাবনা
অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় তাঁর মা তাঁকে একবার পঞ্চায়েত অফিসে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি প্রচুর নষ্ট হওয়া টিউব লাইট (Fluorescent lamp) দেখে মনে মনে হিসাব করেন এই পরিমাণ লাইট দিয়ে গোটা গ্রামেই আলো পৌঁছান যাবে। একথা পঞ্চায়েতের অসিফে জানালে, তারা তাঁকে নাকচ করে দেয়। সেইসঙ্গে জানান এই টিউব সারাতে অনেক অর্থ ব্যয় হবে।
নরসিংহের যাত্রা শুরু
সেখান থেকে ফিরে আসার পর তিনি টিউব লাইট নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। নতুন লাইট তৈরি থেকে শুরু করে নষ্ট হওয়া লাইট কিভাবে সারিয়ে নেওয়া যায়। স্কুলের লাইব্রেরীর পাশাপাশি জেলার লাইব্রেরীতেও যেতে থাকেন। এই সময় তিনি উপলব্ধি করেন স্কুলের পড়াশুনা শেষ হয়ে গেলে এই কাজে আরও মনোনিবেশের জন্য তিনি ডিস্টেন্স থেকে পড়াশুনা করবেন।
আবিস্কৃত হল ‘চারি সূত্র’
যেমন ভাবা তেমনই কাজ, এইভাবে পড়াশুনা করতে থাকার পাশাপাশি টিউব লাইট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে ২০০০ সালে তিনি এই কাজে সফল হন। তাঁর এই আবিষ্কারের নাম হল ‘চারি সূত্র’। এর মাধ্যমে উন্নতমানের স্বল্প বিদ্যুৎ খরচায় টিউব থেকে শুরু করে, টিউব সংশোধন এমনকি টিউবের আয়ুও বৃদ্ধির উপায় বের করলেন তিনি। এই নব আবিস্কৃত টিউবের দাম মাত্র ৯৯ টাকা।
নরসিংহ চারির এই সাফল্যের সংবাদ ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম তেলুগু ম্যাগাজিন এনাডুতে প্রকাশিত হয়েছিল। এর পরবর্তীতে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁর নামে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ চিঠি এসেছিল। তবে এত চিঠির মধ্যে একটি পড়ে তাঁর চোখে জল এসে গেছিল।
নরসিংহের সাফল্য লাভ
নরসিংহ চারি বিজয় পল্লী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছিল। প্রায় ৫ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি। এইভাবে ২০০৫ সালে ‘ইয়ং সায়েন্টিস্ট’ নামে একটি ইভেন্টে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রশংসা করে নিজামাবাদের পৌর কর্পোরেশন বিভাগে কাজের সুযোগ করে দেন।
এই কাজের সুবাদে চারি এবং তাঁর দল মাত্র ৯ মাসে কয়েক লক্ষ টিউব লাইট প্রস্তুত করে পৌর কর্পোরেশনের প্রায় ১২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। তাঁর এই কাজের ফলস্বরূপ এই প্রকল্পটি ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং অর্থ সাশ্রয় করতে’ সেরা প্রকল্পের খেতাব অর্জন করেছিল। প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি টিউব লাইট সারিয়ে তুলে গ্রামে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
সম্মানিত হন নরসিংহ
এই সাফল্য লাভের পর নরসিংহ জানান, ‘জেলা পঞ্চায়েত অফিসারের দেওয়া ১২০০ টি গ্রামের একটি প্রকল্পকে কোন কিছু না ভেবেই হ্যাঁ বলে দিই। আমরা গ্রামের ৩৬ মহিলাকে ট্রেনিং দিয়ে এই কাজের অংশ করে তুলি’। ধীরে ধীরে তাঁর এই কাজের ফলে নানাবিধ সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে।