বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান এক কথায় অনস্বীকার্য। এই যুগমানবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নড়ে গিয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের ভীত। তাঁর এই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও!সেই রকমই একজন হলেন হরিয়ানার ঝাজ্জার জেলার দুবলধান গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা লালতি রাম। যিনি শুধু নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে সমর্থনই করেননি, পাশাপাশি, দেশের স্বাধীনতার পরও যোদ্ধাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় লালতি রাম ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
তারপর যখন নেতাজি সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন এবং সৈন্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন, তখন তিনি এই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম সৈনিক লালতি রাম INA-তে থাকাকালীন সাহসিকতার জন্য ৩ টি পদক পেয়েছিলেন।এছাড়াও, তিনি আম্বালা, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, জাপান এবং কলকাতার কারাগারেও ছিলেন। এমনকি, বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর পাঁচ ছেলের সবাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে এই মহান সৈনিকের ৫ নাতি সেনাবাহিনীতে এবং এক নাতি পুলিশে রয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে তাঁর নাতি বিপাক কুমার জানিয়েছেন যে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সেনাবাহিনীতে থেকে তিনি বহু দেশে যুদ্ধ করেছেন। লালতি রাম অসুস্থ হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ আগে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত কুমার ডোভালের সাথে দেখা করার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা হয়েছিল, কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি দেখা করতে পারেননি। এরপরেই ২০২১-এর ৯ মে তিনি মারা যান।
এদিকে, লালতি রামের মহতী কর্মকান্ডের জন্য, রাজ্য সরকারের তরফে ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি, তাঁকে হরিয়ানার স্বাধীনতা সংগ্রামী সম্মান সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। এছাড়াও, বিপাক কুমার আরও জানিয়েছেন যে, তাঁর ঠাকুরদা রোহতকের মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রিডম ফাইটার মেমোরিয়াল হল তৈরি করেছিলেন। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের মেয়েদের বিয়ের টাকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাইয়ে দিতে সাহায্য করতেন।
তিনি সেনাবাহিনী থেকে দেশে ফিরে আসার প্রায় এক বছর পর দেশ স্বাধীন হয়। তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য লালতি রাম ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালাম, প্রণব মুখার্জি এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে একাধিকবার সম্মানিত হয়েছেন।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকেও বিশেষ সম্মান পেয়েছেন তিনি। তবে, তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে বিপাক দাবি জানিয়েছেন যে, গ্রামের সরকারি কলেজের নাম বদলে তাঁর ঠাকুরদার নামে করা হোক। স্বভাবতই, নেতাজির অধিনায়কত্বে থাকা এই মহান যোদ্ধার জন্য গর্বিত দেশবাসীও।