বাংলা হান্ট ডেস্ক: কখনও শুনেছেন স্কুলের খরচ মেটাতে চপশিল্পের ওপর ভরসা রাখতে হয়েছে স্বয়ং স্কুলেরই প্রধান শিক্ষককে? শুনতে সম্পূর্ণ অদ্ভুত এবং অকল্পনীয় মনে হলেও ঠিক এইরকমই এক ঘটনা ঘটেছে আমাদের রাজ্যে। শুধু তাই নয়, রীতিমত চপ বিক্রি করেই স্কুলকে ভালোভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এমনকি, চপ বিক্রির মাধ্যমে লাভের টাকাতেই অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতনও তুলে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
জানা গিয়েছে যে, ঝাড়গ্রাম শহরের এক বেসরকারি নার্সারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হলেন তিমির মল্লিক। করোনার আবহে তাঁর স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। এমনকি, অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে যায় যে, অধিকাংশ অভিভাবকই স্কুলের নির্ধারিত ফি-ও মেটাতে পারেননি। ফলে, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক।
এদিকে, সেই সময়ে ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করেও মেলেনি কোনো লাভ। কারণ অধিকাংশ অভিভাবকদেরই স্মার্টফোন না থাকায় পড়ুয়ারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি সেই ক্লাসগুলিতে। বরং অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষিকাদের মোবাইলে রিচার্জ করে দিতে হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
এমতাবস্থায়, উপায় না পেয়ে চপ এবং মিষ্টির দোকান শুরু করেন তিমির বাবু। বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ওই শিক্ষকের গত দেড় বছর যাবৎ ভালই চলছে দোকান। সবচেয়ে বড় কথা হল, সেই লাভের টাকাতেই নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন ১৫ জন শিক্ষিকা ও ৬ জন শিক্ষাকর্মীও। জানা গিয়েছে যে, নিজেই চপ-সিঙাড়া ভাজতে শুরু করেন তিমির।
তবে, তাঁকে এই কাজ করতে দেখে এগিয়ে আসেন স্কুলের শিক্ষাকর্মী সন্দীপনারায়ণ দেব, অর্পণ নন্দ, শ্যামল দোলুই, কল্পনা সিংহ, দুর্গা দে-রাও। এমনকি, আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা বর্তমানে এই দোকানের নিয়মিত খদ্দের। সকালে ইডলি, হিংয়ের কচুরি, ঘুগনি, চা, আলুর চপ মিললেও বিকেল নাগাদ থাকে আরও রকমারি সব খাওয়ারের সম্ভার। ভেজিটেবল চপ, ডিমের চপ, এগ চাউমিন, চিকেন চাউমিন, চিকেন কাটলেট, সিঙ্গাড়াও থাকে সেই তালিকায়।
তার সাথে থাকে মিষ্টির সম্ভারও। রসগোল্লা, পান্তুয়া, গজা, মিষ্টি দই সবই পাওয়া যায় “স্পার্ক ২০২০” নামের ওই দোকানে। এই প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক জানিয়েছেন, ‘‘করোনার সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রমাণ হিসেবেই আমি দোকানের এই নাম দিয়েছি। তবে, শুধু চপশিল্প কেন, নিষ্ঠাভরে যে কোনও কাজ করলেই সাফল্য আসে। যা মূলধন ছিল তাতে বড়জোর দু’মাস শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো যেত। তার পরে কী হবে ভেবেই চপ-মিষ্টির দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিই।’’
বর্তমানে তিমির বাবুর স্বপ্ন দোকান লাগোয়া জমিতে আগামী দিনে আদিবাসী-মূলবাসী শিশুদের জন্য একটি অবৈতনিক স্কুল খোলা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই বেসরকারি স্কুলের দু’টি শাখা। একটি বাংলা মাধ্যম, অন্যটি হল ইংরেজি মাধ্যম। করোনার আগে ওই স্কুলে প্রি-নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাতশোর কাছাকাছি। কিন্তু, করোনার মত ভয়াবহ মহামারীতে পাল্টে যায় সেই চিত্র। এমতাবস্থায়, ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া পঞ্চায়েতের পুরুষোত্তমপুরে তিমিরের তিন কাঠা জমি ছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেখানেই তিনি শুরু করেন তাঁর এই দোকান। পাশাপাশি, স্কুল চালানোর জন্য তাঁর এই উদ্যোগকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।