বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কোভিড পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে দেশে। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন তিন লাখেরও বেশি মানুষ। একই পরিস্থিতি মৃত্যুর ক্ষেত্রেও। ইতিমধ্যেই সারা ভারতবর্ষ জুড়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের। এমনকি গত ২৪ ঘন্টাতেও মৃত্যু হয়েছে প্রায় চার হাজার মানুষের। রাজ্যগুলির মধ্যে বেশ ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে। গত কয়েকদিন আগেই খবর পাওয়া গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের গঙ্গার তীরবর্তী প্রায় ১১৪০ কিলোমিটার জুড়ে কবর দেওয়া হয়েছে প্রায় দুহাজার লাশ। যার মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রায় ৩০ টি অঞ্চল। কেন এত মানুষকে একসঙ্গে কবর দেওয়া হচ্ছে কিম্বা ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে জলে, উন্নাওয়ের শুক্লাগঞ্জ এলাকার একটি গ্রাম সরোসি। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই হিন্দু। তাই এদের মধ্যে সাধারণত মৃতদেহ কবর দেওয়ার রীতি নেই।
কিন্তু কোভিডের এই ভয়ঙ্কর মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে কোন রীতি আর প্রথারই ধার ধারছেন না মানুষ। একদিকে যেমন কাঠের দাম বাড়ার কারণে অন্তিম সংস্কার করার মত পয়সা জোগাড় করতে পারছেন না অনেকেই তেমনি অন্যদিকে রয়েছে করোনার ভয়। সূত্রের খবর অনুযায়ী, করোনার ভয়ের কারণ নেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃতদেহের সৎকার করতে চাইছেন গ্রামবাসীরা। আর সেই কারণেই নদীর ধারের বালিতে মৃতদেহ পুঁতে দেওয়া কিংবা জলে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে এত বেশি।
একথা ঠিক যে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রামের দিকে জলপ্রবাহ নামের একটি রীতি রয়েছে। সর্প দংশন বা কোনো আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে শবদেহ গঙ্গা যমুনার জলে ভাসিয়ে দেন এলাকাবাসীরা। কিন্তু এত বৃহৎ আকারে এর আগে তা দেখা যায়নি। আর গঙ্গার ধারে বালিতে মৃতদেহ কবর দেওয়ার রীতি তো কখনোই ছিলনা গ্রামবাসীর মধ্যে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোভিডের ভয় হয়ে উঠেছে বড় দায়। শুধু সোরসি গ্রামেই নয় আশপাশের বহু এলাকা থেকেই এখন মানুষ গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চলে মৃতদেহ কবর দিয়ে যায়।
উন্নাওয়ের শুক্লাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা চমন শুক্লা বলেন, “সাধারণত এই এলাকায় মৃতদেহ কবর দেওয়ার রীতি নেই। কিন্তু এত মৃত্যু হচ্ছে, লোকে রীতিমতো ভয়ে কুঁকড়ে রয়েছে। এমনকি মৃতদেহ পুড়িয়ে শেষকৃত্য করতেও তারা ভয় পাচ্ছেন। কম করে হলেও প্রায় কুড়ি বছর ধরে গঙ্গার ঘাটে মৃতদেহ সৎকার হতে দেখছি। কখনো এমন দৃশ্য দেখিনি। কিন্তু এখন বহু দুর দুর থেকেও অনেকেই এসে গঙ্গার ধারে বালিতে মৃতদেহ কবর দিচ্ছেন। যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি”
কানপুরের বিলোর এলাকার খেরেশ্বর ঘাটে দাহকার্যের কাজ করেন জগত প্রকাশ। তিনি বলেন, “আমরা কয়েক প্রজন্ম ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু আমরা কখনই শবদেহ কবর দিতে দেখিনি। কিন্তু আজ সত্যি এটাই যে সবচেয়ে বেশি শবদেহ এখানেই কবর দেওয়া হচ্ছে। ” আগে কানপুরের এই খেরেশ্বর ঘাট থেকেই মিলেছিল চারশোরও বেশি মাটি চাপা মৃতদেহ। এই মহামারী যত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ততোই সামনে আসছে একের পর এক মর্মান্তিক দৃশ্য। কয়েকদিন আগেই উন্নাওয়ে শুক্লাগঞ্জ এবং বক্সার ঘাঁটে পাওয়া গিয়েছিল আটশোরও বেশি কবর। প্রায় সাড়ে তিনশো মানুষকে মাটিচাপা কনৌজের মহাদেবী গঙ্গা ঘাটেও। গাজীপুরে গঙ্গার তীরে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল প্রায় ২৮০ টি মৃতদেহ। এক দিক থেকে দেখতে গেলে সারাদেশ যেন এগিয়ে চলেছে এক ধীর মৃত্যুর দিকে। ক্রমশই আরো বেশি হতাশাব্যঞ্জক হয়ে উঠছে চারদিকের দৃশ্য।