বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাজস্থানের করৌলিতে হিন্দু নববর্ষের শোভাযাত্রায় পাথর নিক্ষেপের সাথে সাথে অগ্নিসংযোগ ও লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, এমতাবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে ৬০০ মিটার দূরে সিটি মলে প্রায় ১৫ জন মুসলিম যুবক তাঁদের দোকানপাট বন্ধ করে সেখানে আটকা পড়ে যান। যদিও, বাইরে বেরোলেই তাঁদের বড় বিপদের আশঙ্কা ছিল।
ওই পরিস্থিতিতে, সিটি মলের মালিক সঞ্জয় সিংয়ের বোন মধুলিকা রাজপুত সাহসের সাথে সব দোকানদারকে তাঁর ঘরে নিয়ে যান। যদিও, মলের সামনে দুষ্কৃতীরা জিজ্ঞাসা করেছিল যে, ওখানে কেউ লুকিয়ে রয়েছে কিনা। তখনই, মধুলিকা মলের ভিতর থেকে তালা লাগিয়ে দেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে ওই দোকানদারেরা একে একে বাড়ি চলে যান।
মূলত, হিন্দু নববর্ষের শোভাযাত্রায় পাথর নিক্ষেপের পরে শহরে অগ্নিসংযোগ ও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। এমতাবস্থায় মধুলিকা রাজপুত তাঁর মলের হিন্দু-মুসলিম দোকানদারদের বাইরে বেরোতে বাধা দেন। এছাড়াও, মধুলিকার ভাই সঞ্জয় সিং সমস্ত মুসলিম যুবকদের বলেন যে, “সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, আপনারা সবাই এখানে নিরাপদ।” প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সবার পরিজন তাঁদের নিতে আসেন এবং তাঁরা নিরাপদে বাড়ি চলে যান।
এই প্রসঙ্গে দানেশ নামের এক দোকানদার জানান, “ওই ঘটনা জানতে পেরে তড়িঘড়ি দোকানের জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করি। এমনকি, দোকানে তালাও দিতে পারিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাস্তায় ভিড় দেখতে পাই। যা দেখে আবার মলে চলে আসি। তখন ওপর থেকে দিদি এলেন। বললেন সবাই ওপরে গিয়ে রুমে বসুন, আমি সামলে নেব।” এদিকে, তালিব খান, সমীর খানেরাও জানান যে, “দিদির কারণেই আমরা নিরাপদে ছিলাম সেদিন।”
তাঁরা আরও জানান যে, “আমাদের সবাইকে রুমে নিয়ে গিয়ে বসানো হল। আমাদেরকে চাও দেওয়া হয়। সবাই সান্ত্বনা পেয়েছিলাম। আকষ্মিক ওই ঘটনা দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছিলনা, তাই দোকানের শাটার টেনে দেওয়া হয়। মলের গেট বন্ধ করে সবাইকে বাঁচিয়েছেন দিদি।”
“বাইরে কোলাহল হচ্ছিল; দোকানদাররা ভিতরে ফিরে বললেন, দিদি আমাদের বাঁচাও”:
মলের মালিক সঞ্জয় সিংয়ের বোন মধুলিকা রাজপুত বলেন,” সমস্ত দোকানদার শাটার নামিয়ে বাইরে যাওয়ার কথা ভাবলেও বাইরে শোরগোলের কারণে তাঁরা ভেতরে ফিরে আসেন। তাঁরা বলছিলেন, দিদি আমাদের বাঁচান। তখন আমি আমার দোকানে ছিলাম। সব দোকানদারদের ঘরে বসানোর পর গেটের তালা বন্ধ করে দিই। বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে পারেনি। গেটের তালা বাইরে থেকে লাগানো ছিল। সাড়ে ৫ টা থেকে বিকেল ৫ টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি শান্ত হলে ৯ টার দিকে দোকানদাররা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান।”
“আমরা ভয় পেয়েছিলাম”:
এই প্রসঙ্গে দানিশ জানিয়েছেন, “দোকানে রং করার কাজ চলছিল। হঠাৎ দেখি লোকজন এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে। তারপর শুনি সমাবেশে পাথর ছোঁড়া হয়েছে। এরপর আমরা দোকান বন্ধ করে দিই। বাইরে গিয়ে দেখি মুখোশ পরা লোকজন সমাবেশে দাঁড়িয়ে আছে। ভিড় ছিল প্রচন্ড। আমরা মুসলমান ছিলাম, তাই ভয় পাচ্ছিলাম যে আমাদের কিছু হতে পারে। এরপর মলের মালিক আমাদের ওপরে ডেকে তাঁর ঘরে বসিয়ে দেন।”