বাংলা হান্ট ডেস্ক: বাংলায় একের পর এক ঐতিহ্যগুলো যেন ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। ট্রাম থেকে শুরু করে হলুদ ট্যাক্সি সবই বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। আর এবার এই একই পথের দিশারী ঐতিহ্যবাহী ডাকঘর (Post Office)। যার সঙ্গে জড়িয়ে রবি ঠাকুরের অনেক স্মৃতি (Rabindranath Tagore)। বলা ভালো এই ডাকঘরের নাম দিয়েছিলেন স্বয়ং বিশ্বকবি যার নাম জোড়াসাঁকোর অর্চনা উপ-ডাকঘর। সেই পোস্ট অফিসই এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পোস্ট অফিসে যেনো ঘুণ ধরেছে।
বেহাল দশা অর্চনা উপ-ডাকঘরের (Post Office):
কলকাতা পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে ওই ডাকঘরটি অবস্থিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অদূরেই। বলা হয়, অর্চনা ডাকঘরের (Post Office) নামকরণ করেন রবীন্দ্রনাথই। এমনকি “অর্চনা” নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা ছিল, এই পত্রিকার সাথে জড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের নাম।। সেই সময় ওই পত্রিকায় এসে জমা হতো এই ডাকঘরেই। আর সেই পত্রিকা নিজে গিয়ে সংগ্রহ করতেন রবি ঠাকুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই ডাকঘরের সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আমাদের বিশ্ব কবি। কিন্তু বর্তমানে সেই ডাকঘরে অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
তথ্যসূত্রে জানা যাচ্ছে, দেওয়ালের আস্তরণ কোথাও খুলে খুলে পড়ছে, তো আবার কোথাও ফুলে উঠেছে। শুধু তাই নয়, দেওয়ালেও ফাটলও ধরা পড়েছে। অর্থাৎ ভগ্নপ্রায় অবস্থার প্রাথমিক পর্যায় রয়েছে ডাকঘরটি (Post Office)। ডাকঘরের কর্মীরা জানান, চাঙড়ও নাকি খসে পড়ছে। কিছু মাস আগে একটি বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যান এক ব্যক্তি। অল্পের জন্য মাথায় চাঙর পড়ার হাত থেকে রক্ষা পান তিনি। মূলত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এমনটা ঘটছে বলে জানা যায়। গোটা চত্বর পরিচ্ছন্নতার অভাবে ধুকছে। ভিতরে ও বাইরে সেই দৃশ্যও ধরা পড়ে।
আরও পড়ুনঃ OMG! ওটা কী! কখনও ডুবছে, আবার ভেসে উঠছে! দীঘার সমুদ্রে এই বস্তুটিকে ঘিরে বাড়ছে কৌতূহল
মামলা মোকদ্দমার কারণে পিছিয়ে সংস্করণের কাজ: ডাক বিভাগ সূত্রের খবর, ডাকঘরের (Post Office) বেহাল দশা কাটাতে কর্মীরা উপর মহলে এই বিষয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মামলা মোকদ্দমা। মূলত মালিকপক্ষের সঙ্গে ভাড়াটে ডাক বিভাগের নানা রকমের মামলা মোকদ্দমার কারণে ডাকঘর সংস্করণের কাজ বারবার আটকা পড়ছে। যার ফলে বর্তমানে রবি ঠাকুরের স্মৃতি জড়ানো অর্চনা উপ-ডাকঘরের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
এই বাড়ির এক অংশীদার প্রণব কুমার দে নামের ব্যক্তি এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। পারস্পরিক বিবাদের পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন ডাকঘরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে জড়িয়ে অনেক গল্প নাকি অহেতুক। তিনি জানান, “আমার বাবা বাড়িটি কেনেন। ভাড়া নিয়ে ডাক বিভাগের সঙ্গে অনেক দিন ধরে গোলমাল চলছে। তবে শরিকি পরিবারের কিছু সমস্যাও রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এই ডাকঘরের নাম রেখেছিলেন বলে শুনেছি। তবে এখানে পত্রিকা সংগ্রহে আসতেন কিনা, নিশ্চিত নই। তাছাড়া ডাকঘরটি (Post Office) আগে অন্য জায়গায় ছিল।”
আরও পড়ুনঃ চালানো যাবে না হলে, ৪৯ বছর পর ভাইরাল ‘শোলে’র বাদ পড়া দৃশ্য! কী এমন ছিল?
এই বিষয় পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার কার্তিক ধর বলেন, “পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়।” উল্টোদিকে এই বিষয় নিয়ে কলকাতার পুরসভা জানিয়েছে, সম্পত্তিটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়ায় নিয়ে তাদের কিছু করার নেই। কিন্তু এখন প্রশ্ন কতদিন এমন অবস্থায় থাকবে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ডাকঘর (Post Office)।