বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamilk Exam)। লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা এই মাধ্যমিক, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সকলেই। তবে যে দু পায়ে হাঁটতে পারেনা, চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হতে হয় হাজারো বাঁধার, তার লড়াইটা হয়তো একটু হলেও অন্যরকম। আমরা বলছি পোলবার (Polba) মহসিনার কথা। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই তার। হাঁটু দিয়ে হাঁটে। তবে মনের অদ্যম ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আজ সে আর পাঁচটা পরীক্ষার্থীর মত জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিচ্ছে।
পোলবার কাশ্বারার বাসিন্দা মহসিনা খাতুনের যখন ছয় বছর বয়স হঠাৎই একদিন জ্বর সর্দি হয়। চিকিৎসা করালেও পুরো সুস্থ হয়ে ওঠেনি সে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বাবা একটি কারখানার শ্রমিক মা পরিচারিকার কাজ করে যতটুকু উপার্জন করে তা দিয়ে কোনরকমে চলে সংসার। মেয়ের ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। তবে মেয়ের পড়াশোনার জন্য কোনদিনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তার বাবা-মায়ের আর্থিক অসচ্ছলতা। তারা উৎসাহ জুগিয়েছে মেয়েকে। নিজের জেদ আর লড়াই করে নিজেকে তৈরি করেছে মহসিনা।
আলিনগর ইয়াসিন মন্ডল শিক্ষানিকেতন স্কুলে পড়াশোনা করে। এবছর সে মাধ্যমিক পরীক্ষার দিচ্ছে। সুগন্ধা হাইস্কুলে তার সিট পরেছে। নিজের পায়ে হাঁটতে বা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না ,তাই হাঁটু মুড়ে বাসে করে মায়ের সাথে গতকাল মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে পৌঁছয় মোহসিনা। বাকি পরীক্ষা গুলিও এমন ভাবেই দেবে সে। মোহসিনা জানায়, মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে।
মেয়ের জীবনের এই লড়াই প্রসঙ্গে তার মা ইসমাতারা বিবি জানান, ২০১০ সালে হঠাৎই একদিন প্রচন্ড জ্বর সর্দি হয় , সঙ্গে সঙ্গেই তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় পরে আস্তে আস্তে মেয়ের পা দুটো বেঁকে যেতে থাকে। তখন থেকেই আর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ঠিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারেনা। হাঁটু মুড়ে হাঁটিতে ভর করেই স্কুলে যাতায়াত করে। কখনো তার বাবা কখনো মা মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসেন আবার নিয়ে আসেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কোন শিক্ষকও দিতে পারেনি পরিবার, নিজেই পড়াশোনা করে আজ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। মেয়েকে দেখে আমাদের কষ্ট লাগে তবুও চাই ও নিজের পায়ে দাঁড়াক।
মোহসিনার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে পোলবা দাদপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা ইয়াসিন মন্ডল শিক্ষানিকেতন স্কুলের সভাপতি তানসেন আলী মন্ডল জানান, জন্ম থেকে ছাত্রী প্রতিবন্ধী ছিল না,শরীর অসুস্থ হয়ে প্রতিবন্দী হয়। অনেক চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। গরিব ঘরের মেয়ে হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। তার প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। মাধ্যমিক পরীক্ষায় যেন সফলভাবে উত্তীর্ণ হয় এবং সরকারিভাবে যদি সাহায্য করা যায় সেটাও আমরা দেখব।