বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের অশ্বমেধের ঘোড়া প্রায় গোটা বাংলা চষে বেড়ালেও নন্দীগ্রামের সেই অশ্বের গতিরোধ পড়তে পেরেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। যার জেরে তৃণমূল বিপুল জয় পেলেও হার হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee)। নিয়ম অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করলেও এখন ছয় মাসের মধ্যেই উপনির্বাচন জিতে মসনদে ফেরত আসতে হবে তাকে। সেক্ষেত্রে বাংলায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাতটি আসনের উপনির্বাচন। ইতিমধ্যেই মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপ নির্বাচনের আয়োজন করা হোক। দরকার হলে প্রচারে মাত্র সাত দিন সময় দিলেই চলবে।
কিন্তু দেশজুড়ে এখন চলছে করোনা। আর সেই কারণে নতুন করে উপনির্বাচনের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউই। গত বিধানসভা নির্বাচনে করোনা আরো বেশি ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছিল তৃণমূল। এখন এই নির্বাচনে ভাইরাস আরো ছড়িয়ে পড়ুক, তার চাইবেন না কেউই। অবশ্য শুধু মমতা ব্যানার্জি নয়, একই সমস্যা দেখা দিয়েছে, উত্তরাখণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াতের (Tirath Singh Rawat) ক্ষেত্রেও। বেশ কিছু সমস্যার কারনে, উত্তরাখণ্ডের পূর্ব মুখ্যমন্ত্রী তিবেন্দ্র সিং রাওয়াতকে(Tivendra Singh Rawat ) আসল থেকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হয় তাকে। নিয়ম অনুযায়ী তাকেও ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচন জিতে আসনে ফিরতে হবে এক্ষেত্রে তাহলে উপায় কি? কি বলছে সংবিধানের নিয়ম? আসুন দেখে নেওয়া যাক।
সংবিধানের ১৬৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনে ৬ মাসের মধ্যে পরাজিত অথবা বিধানসভায় সদস্যপদ না থাকা মুখ্যমন্ত্রী যদি উপনির্বাচন জিতে না আসেন, সেক্ষেত্রে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে। কিন্তু উপনির্বাচনে নিয়মের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ছাড় রয়েছে। পিপলস অ্যাক্ট ১৯৫১-র মাধ্যমে এই আইনে কিছু ছাড় ধার্য হয়েছে। ১৫১এ ধারা অনুযায়ী, দুটি শর্তে এক্ষেত্রে বাঁচতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর পদ।
১.যদি মুখ্যমন্ত্রীর মেয়াদ এক বছরের কম হয়।
২.যদি নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেয়, যে ওই সময়ে কোনোভাবেই উপ-নির্বাচন করানো সম্ভব নয়।
একমাত্র সে ক্ষেত্রেই ছাড় পেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রথম শর্ত উত্তরবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তিরথ সিং রাওয়াতের ক্ষেত্রে কাজ করলেও মমতা ব্যানার্জির ক্ষেত্রে তা কাজ করবে না। তিরথ সিং রাওয়াতের মুখ্যমন্ত্রী পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এক বছরের মধ্যেই। পরের বছরই উত্তরবঙ্গে নির্বাচন রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ক্ষেত্রে এই নিয়ম লাগু নয়। কারণ আগামী ৫ বছর বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে চলেছেন তিনি। সেই কারণে তাঁকে নির্ভর করতে হবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের উপরেই।
তবে এ ক্ষেত্রে আরেকটি অপশনও রয়েছে। ছয় মাস মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আবার শপথ নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিনি হাতে পাবেন আরো বাড়তি ছ মাস। অবশ্য জানা গিয়েছে, নির্বাচন কমিশন এখনো কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি উত্তরবঙ্গের উপ নির্বাচন এবং পশ্চিমবঙ্গের উপ নির্বাচনের বিষয়ে। সেক্ষেত্রে যদি তারা উপ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে বেঁচে যেতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর পদ। তবে এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত নির্বাচন করানোরই সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।