বাংলা হান্ট ডেস্ক: রথযাত্রা (Ratha Yatra) হল এমনই একটি উৎসব যেটি সমগ্র দেশজুড়েই অত্যন্ত ভক্তির সাথে এবং মহাসমারোহে সম্পন্ন হয়। এমতাবস্থায়, আগামী ৭ জুলাই অর্থাৎ রবিবার সম্পন্ন হবে চলতি বছরের রথযাত্রা (Ratha Yatra)। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া থেকে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুরু হয় এবং দশমী তিথিতে এই রথযাত্রা শেষ হয়। জানিয়ে রাখি যে ভগবান জগন্নাথ শ্রীকৃষ্ণের অবতার হিসেবে বিবেচিত হন। জগন্নাথদেব তাঁর বড় দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রার সাথে প্রতি বছর ওড়িশার (Odisha) পুরী (Puri) শহরে রথযাত্রার জন্য বের হন এবং এই যাত্রাই সারা বিশ্বে রথযাত্রা নামে পরিচিত।
জগন্নাথদেবের রথযাত্রা (Ratha Yatra) কিভাবে শুরু হয়েছিল:
মনে করা হয় যে, জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করলে যে পুণ্য অর্জন হয় তা ১০০০ যজ্ঞের সমান। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রার রথ নির্মাণের মধ্য দিয়ে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই রথযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়। পুরীতে জগন্নাথদেবের ৮০০ বছরের সুপ্রাচীন মন্দির রয়েছে এবং সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথদেব রূপে বিরাজ করেন। এমতাবস্থায়, চলুন জেনে নিই যে কিভাবে এই ঐতিহাসিক রথযাত্রা শুরু হয়েছিল? পাশাপাশি, ৩ টি রথের সাথে সম্পর্কিত একাধিক বিশেষ তথ্যও আমরা উপস্থাপিত করছি বর্তমান প্রতিবেদনে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, একবার শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামের কাছে তাঁদের বোন সুভদ্রা শহরটি দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তারপর দুই ভাই তাঁদের বোন সুভদ্রার জন্য একটি বিশাল রথ প্রস্তুত করেন এবং তাতে চড়েই তিনজনই শহর ভ্রমণের জন্য রওনা হন। পথে, তাঁরা তিনজন গুন্ডিচায় তাঁদের মাসির বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে ৭ দিন অবস্থান করেন। তারপর শহর ভ্রমণ শেষ করে তাঁরা পুরীতে ফিরে আসেন। সেই থেকে, প্রতি বছর তিন ভাই-বোন রথে শহর ভ্রমণের মাধ্যমে তাঁদের মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে যান। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এই সফরকালে বলরামের রথ সামনের দিকে, বোন সুভদ্রার রথ মাঝখানে এবং জগন্নাথদেবের রথ পেছনে থাকে।
আরও পড়ুন: রথযাত্রায় ভাগ্য ঘুরবে এই ৪ রাশির! মিলবে স্বয়ং মহালক্ষ্মীর কৃপা, হবে টাকার বৃষ্টি
এই যাত্রার গুরুত্ব: জগন্নাথদেব এবং তাঁর ভাই-বোনের রথগুলি নিমের পরিপক্ক কাঠ থেকে তৈরি করা হয়। এদিকে, রথ তৈরিতে কাঠ ছাড়া অন্য কোনও উপকরণ ব্যবহার করা হয় না। ভগবান জগন্নাথের রথের মোট ১৬ টি চাকা রয়েছে এবং সেগুলি অন্য ২ টি রথের চেয়ে বড় হয়। রথযাত্রার সময়ে ধর্মীয় আচারও মেনে চলা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, শুধুমাত্র এই রথযাত্রাকে প্রত্যক্ষ করলেই ১,০০০ যজ্ঞের পুণ্য ফল পাওয়া যায়। যখন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা তিনজন সজ্জিত হয়ে রথযাত্রার জন্য প্রস্তুত হন, তখন পুরীর রাজা গজপতির পালকি আসে এবং তারপর রথের পুজো হয়। এরপর সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথ মণ্ডপ ও রথযাত্রার পথ পরিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন: ভারতীয়দের জন্য বিরাট সুসংসবাদ নিয়ে এল সৌদি আরব! জানলে আপনিও হয়ে যাবেন খুশি
কেন রথ প্রতি বছর এই সমাধিতে থামে: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, জগন্নাথদেবের রথ কিছু সময়ের জন্য মুসলিম ভক্ত সালবেগার সমাধিতে থামে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, একবার জগন্নাথদেবের ভক্ত সালবেগা ভগবানের দর্শন পাওয়ার ক্ষেত্রে পৌঁছতে পারেননি। অতঃপর তাঁর মৃত্যুর পর যখন সমাধি নির্মিত হয়, সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় রথ নিজে থেকেই থেমে গিয়েছিল। এরপর তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয় এবং তারপরে রথ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সেই থেকে প্রতি বছর রথযাত্রার সময় পথিমধ্যে সালবেগার সমাধিতে জগন্নাথদেবের রথ থামে।