বাংলা হান্ট ডেস্ক: ৮ নভেম্বর, ২০১৬। দেশের অর্থনীতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে রয়েছে দিনটি। ওই নির্দিষ্ট দিনে রাত আটটা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৫০০ এবং ১,০০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ করার ঘোষণা করেন। এমনকি, নোটবন্দির (Demonetisation) ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকরও করা হয় মধ্যরাত থেকে। এদিকে, হঠাৎ করে এহেন সিদ্ধান্তের জেরে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এমতাবস্থায়, একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পর এখন প্রশ্ন উঠছে যে নোটবন্দির ৬ বছর পরে ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ঠিক কি কি পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান প্রতিবেদনে সেই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করা হল।
মূলত, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮ টায় নোটবন্দির ঘোষণা করা হয়। তার আগে দেশবাসী এই ঘোষণা সম্পর্কে কিছুই টের পান নি। এমতাবস্থায়, মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ রাত ১২ টা থেকে ৫০০ টাকা এবং ১,০০০ টাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এই ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, দেশ থেকে কালো টাকা নির্মূল করার পাশাপাশি জাল নোটের রমরমা কমানো এবং একটি “কম নগদ”-এর অর্থনীতি তৈরি করা। এই ঘোষণায় সমগ্ৰ দেশে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। পাশাপাশি, প্রতিটি ব্যাঙ্কের বাইরে দীর্ঘ লাইনও পরিলক্ষিত হয়।
এদিকে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সরকার সংসদে জানিয়েছিল যে নোটবন্দির সাহায্যে ১.৩ লক্ষ কোটি টাকার কালো টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, চলতি বছরের মে মাসে RBI-এর বার্ষিক রিপোর্টে, ২০২১-২২ সালে ভারতীয় মুদ্রার জাল নোটে ১০.৭ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড করা হয়েছিল। পাশাপাশি, ৫০০ টাকার জাল নোট ১০১.৯৩ শতাংশ এবং ২,০০০ টাকার জাল নোটের হার ৫৪ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি: নোটবন্দির পর ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ২০১৬-র অর্থবর্ষে ১১.২৬ শতাংশের তুলনায় ২০২২-এর অর্থবর্ষে ৮০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি, ২০২৭-এর অর্থবর্ষে এটি ৮৮ শতাংশে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অপরদিকে, UPI লেনদেন গত অক্টোবরে ১২.১১ লক্ষ কোটি টাকার নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। মূলত, গত অক্টোবরে UPI ভলিউম ৭৩০ কোটি লেনদেনের রেকর্ড তৈরি করেছে। পাশাপাশি, চলতি বছর ভারত জুড়ে প্রায় ৭১ বিলিয়ন ডিজিটাল পেমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
ক্যাশ সার্কুলেশন বৃদ্ধি পেয়েছে: জনসাধারণের কাছে চলতি বছরের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত নগদের পরিমান ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকার নতুন শিখরে পৌঁছেছে। যেখানে, ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর এই পরিসংখ্যান দাঁড়িয়ে ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, নোটবন্দির পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেশে ক্যাশ সার্কুলেশন ৭১.৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে RBI থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল পেমেন্টের পাশাপাশি মানুষ এখনও নগদেরও যথেষ্ট ব্যবহার করছেন। নোটবন্দির পরে, ২০১৬-র ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত, দেশে নগদ ছিল মাত্র ৯.১১ লক্ষ কোটি টাকা। এখন তা ২৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতকে “কম নগদ”-এর অর্থনীতিতে পরিণত করার উদ্দেশ্যেও নোটবন্দির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
নোটবন্দি নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন: যখন নোটবন্দি কার্যকর করা হয়েছিল তখন থেকেই এই সিদ্ধান্ত বারংবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি, এটাও বলা হয়েছিল যে, এই সিদ্ধান্তের জেরে দেশের অর্থনীতি প্রভাবিত হবে এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশ পিছিয়েও পড়বে। এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিকবার বিদ্ধ করে বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে, RBI-এর তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, যে অর্থকে “অবৈধ” ঘোষণা করা হয়েছিল সেই অর্থের ৯৯ শতাংশ ফের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ফিরে এসেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কালো টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। সর্বোপরি, প্রধানমন্ত্রী মোদীর এহেন সিদ্ধান্ত অর্থনীতিবিদদের একাংশকেও অবাক করে দেয়।