রাজ্যে লাগু হবে AFSPA? কেন্দ্রকে চিঠি দিলেন বিজেপি সাংসদ! জানেন কতটা শক্তিশালী এই আইন?

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। যার কারণে বারবার প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর। ঠিক এই আবহেই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে “অশান্ত এলাকা” হিসেবে বিবেচিত করার দাবি তুললেন বিজেপির লোকসভার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। ইতিমধ্যেই এই প্রসঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি লিখেছেন। যেখানে তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগ এনে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে AFSPA (সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন)-র আওতায় নিয়ে আসার আবেদনও জানিয়েছেন।

AFSPA আসলে কী?

এমতাবস্থায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, AFSPA আসলে কী ধরনের আইন? বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করছি।

AFSPA: প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, মূলত, উপদ্রুত এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে যাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যেই ১৯৫৮ সালে এই আইন (AFSPA) শুরু হয়। দেশের মধ্যে প্রথমে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মণিপুর এবং আসামে ১৯৫৮ সালে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে খলিস্তান আন্দোলনের প্রভাবে ৮০-র দশকে এই আইন প্রয়োগ করা হয় পাঞ্জাবে। এছাড়াও, জম্মু-কাশ্মীরেও নব্বইয়ের দশক থেকে এই আইনের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে।

How strong is the AFSPA.

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, AFSPA প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের খুব একটা ভূমিকা থাকে না। অর্থাৎ, যে রাজ্যে এই আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে সেই রাজ্যের রাজ্যপালের সুপারিশ বা কেন্দ্রের সুপারিশই গ্রহণযোগ্য হয়। এমতাবস্থায়, চলুন জেনে নিই এই আইন কার্যকর হলে নিরাপত্তা বাহিনী কিভাবে শক্তিশালী হয়?

১. এই আইন (AFSPA) লাগু হলে সন্দেহভাজন হিসেবে যে কাউকেই কোনও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করা সম্ভব। এর পাশাপাশি সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেফতার করার লক্ষ্যে অথবা কোনও অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে উপদ্রুত এলাকার যেকোনও বাড়ি বা জায়গায় অনায়াসেই ঢুকতে পারবে সশস্ত্র বাহিনী।

আরও পড়ুন: দুর্নীতি ও ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিরাট চাপে LDF সরকার! কেরালায় নির্বাচনে টিকতে পারবে CPM?

২. এদিকে, কাউকে কোনও বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক করে দেওয়ার পরেও কাজ না হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক গুলি পর্যন্ত করতে পারেন।

৩. গোপন ডেরা থেকে শুরু করে অস্ত্রভাণ্ডার যেগুলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ করতে পারে এমন সন্দেহজনক ডেরা বা অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করে দেওয়া যাবে।

৪. এর পাশাপাশি এই আইন (AFSPA) কার্যকর হলে সরকার কেন একটি এলাকাকে উপদ্রুত বলে মনে করেছে সেই সিদ্ধান্ত দেশের সাধারন বিচারব্যবস্থায় খতিয়ে দেখা হবে না।

আরও পড়ুন: মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হতেই বেঙ্গালুরুর মালিকের গায়ে আতসবাজি! চটে লাল পার্থ জিন্দাল

৫. এই আইন প্রয়োগ করা থাকলে এটি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়। এমতাবস্থায়, উপদ্রুত এলাকায় কোনও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত বা আইডি পদক্ষেপও গ্রহণ করা যায় না।

৬. এছাড়াও, এই আইনে বলীয়ান হয়ে নিরাপত্তা বাহিনী যেকোনও সন্দেহজনক গাড়িকে আটকে তল্লাশিও চালাতে পারে।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এর আগে বহুবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে AFSPA আইন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদও উঠেছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই আইন সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবিও তুলেছে। তবে, এবার রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে AFSPA লাগু করার পরিপ্রেক্ষিতে চিঠি দিলেন বিজেপি সাংসদ।

Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

X