ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় কিভাবে লাভবান হবে ভারত? কতটাই বা হবে ক্ষতি? জানুন বিস্তারিত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইতে প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে ফের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। এদিকে, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই ভারত কিভাবে প্রভাবিত হতে পারে সেই বিষয়গুলি উঠে আসছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মূলত, এর কিছু ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক রয়েছে। বিদেশ সম্পর্কিত বিশ্লেষক শশাঙ্ক মাটটু এই বিষয়ে কিছু দিক তুলে ধরেছেন। বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করবো। চলুন, প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে ভারত কিভাবে লাভবান হতে পারে:

ফের প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প (Donald Trump):

১. বৈদেশিক নীতি: জানিয়ে রাখি যে, ট্রাম্প (Donald Trump) সবসময়ই ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে, তিনি ভারতের সাথে একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন এবং কোয়াডের মতো গ্রুপকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেন। এর পাশাপাশি, তিনি চিনের বিষয়েও কড়া মনোভাব প্রদর্শন করেন। যা ভারতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

এদিকে, রাশিয়ার বিষয়েও ট্রাম্প (Donald Trump) সদর্থক ভূমিকা পালন করতে পারেন। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক পশ্চিমীদের সাথে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি করেছে। তবে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্ক রয়েছে। তার মানে তিনি রাশিয়ার সাথে যুক্ত থাকতে চান। এছাড়াও, ভারতের মতোই ট্রাম্পও ইউক্রেনের যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি চেয়েছেন। এমতাবস্থায়, সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার সাথে ট্রাম্পের সম্পর্কের অর্থ মস্কোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে ভারতের ওপর পশ্চিমী চাপ কম হতে পারে।

২. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে আমেরিকান নেতাদের বক্তৃতাতে ভারত প্রায়শই বিরক্ত হয়। যদিও, ট্রাম্পের (Donald Trump) সাথে বিষয়টা আলাদা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে, তিনি ভারতের ঘরোয়া রাজনীতি সম্পর্কে বেশি কিছু বলেননি (যেমন ২০১৯ সালে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অপসারণ)।

৩. মোদি-ট্রাম্প সমীকরণ: কূটনীতিতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এমতাবস্থায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে ট্রাম্পের (Donald Trump) যুক্তিসঙ্গতভাবে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এটি ভারত-আমেরিকার সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর যেটি আগামী ৪ বছরের জন্য স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে।

তবে, ট্রাম্প ফিরে আসার সাথে সাথে কিছু কিছু নেতিবাচক দিক উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এমতাবস্থায়, চলুন জেনে নেই সেগুলি সম্পর্কে।
১. বাণিজ্য: ট্রাম্প (Donald Trump) ভারতকে বাণিজ্য ব্যবস্থার একটি বড় “অপব্যবহারকারী” হিসেবে দেখেন। তিনি আমেরিকান আমদানিতে উচ্চ ভারতীয় শুল্ক পছন্দ করেন না। যেটি মার্কিন ব্যবসার ক্ষতি করে। এদিকে, ট্রাম্প আমেরিকাতে আসা সমস্ত আমদানি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক চান। কিছু অর্থনীতিবিদ অনুমান করেন যে, ট্রাম্পের এই শুল্ক কার্যকর হলে ২০২৮ সালের মধ্যে ভারতের GDP ০.১ শতাংশ হ্রাস পাবে। এদিকে, ট্রাম্প চিনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্কেরও প্রস্তাব করেছেন। যা একটি অস্থিতিশীল গ্লোবাল ট্রেড ওয়ার শুরু করতে পারে। ভারত এটি এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করবে। এর পাশাপাশি, বিগত কয়েক বছর ধরে, বাইডেন প্রশাসন ভারতকে সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তিতে মূল উৎপাদন ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করছে। কিন্তু, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে ট্রাম্প এই অগ্রাধিকারগুলিকে সমর্থন করবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: ফের কুস্তিতে ফিরছেন ভিনেশ ফোগাট? সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ঘিরে বাড়ছে জল্পনা, কি জানালেন তিনি?

২. অভিবাসন: জানিয়ে রাখি যে, লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ওয়ার্ক ভিসায় আমেরিকাতে রয়েছেন। এদিকে, আমেরিকার অভিবাসন ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে। H1B ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া কঠিন এবং প্রায়ই অনমনীয়। এছাড়াও, বিপুল সংখ্যক ভারতীয় গ্রিন কার্ডের অপেক্ষায় আটকে আছেন (যা তাঁদের PR স্ট্যাটাস প্রদান করে)। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে, তিনি বিদেশি কর্মীদের জন্য H1B কাজের ভিসার অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করেছিলেন। তিনি মূলত, H1B-কে আমেরিকান সমৃদ্ধির একটি “চুরি” হিসেবে বিবেচিত করেছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি অভিবাসন সহজ করার ইঙ্গিতও দেন।

আরও পড়ুন: তৈরি হল ইতিহাস! IPL-এর মেগা নিলামে অংশগ্রহণ করবেন ইতালির এই ক্রিকেটার, চমকে দেবে পরিচয়

আগে থেকে কিছু অনুমান করা যাবে না: ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) একজন গভীরভাবে অপ্রত্যাশিত তথা “আনপ্রেডিক্টেবল” ব্যক্তিত্ব। তিনি কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। (যা ভারত পছন্দ করেনি)। এছাড়াও, তিনি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য তালিবানের সাথে একটি চুক্তি প্রত্যাহার করেন (যেটি ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল)। ট্রাম্পের মার্কিন মিত্রদের (জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া সহ) সাথে লড়াই করার অভ্যাসও রয়েছে। তিনি তাইওয়ানকে চিনা আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়। এমতাবস্থায়, এটি এশিয়ায় মার্কিন জোটকে দুর্বল করতে পারে। যা শুধুমাত্র চিনের অবস্থানকে উন্নত করবে। এর ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হবে ভারতের স্বার্থ।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর