ছন্দে ফিরছে হাওড়া ময়দান, প্রতীক্ষার এক দশকের অপেক্ষার

রাজীব মুখার্জী, হাওড়া- পুরানো ময়দানের ছন্দে ফিরছে আবার হাওড়া ময়দান। প্রতীক্ষার এক দশকের অপেক্ষার অবশেষে হলো অবসান। নিত্যদিনের যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চলেছে হাওড়াবাসি। গতিশীলতায় ফিরছে হাওড়া ময়দান চত্বর। অল্প কিছু মাস বাদেই গঙ্গার নিচে দিয়ে সুরঙ্গ বেয়ে ছুটবে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো। এই দেশের মধ্যে প্রথম জলের তলায় মেট্রো চড়ার সেই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে চলেছে হাওড়া ও কলকতাবাসী। তাই এত কষ্ট , জানজটের যন্ত্রণা ও শত দুর্ভোগ একরকম সহ্য করে নিয়েছিলেন শহরবাসী। আর মাত্র কয়েক মাস পরেই  সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে হাওড়াবাসী। মেট্রোরেল সূত্রে জানা গেছে, হাওড়া ময়দানে মাটির নিচে স্টেশন তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। মোটের উপর ২০২০ সালে হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার কথা।

২০১০ সাল নাগাদ হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়। তারপর দীর্ঘ এক দশক অপেক্ষা করতে হয় শহরবাসীকে। মাটির নিচের কাজ সিংহভাগ শেষ হওয়ার পরেই দিন দশেক আগে নয় বছরের বেশি সময় ধরে ধরে বন্ধ থাকা জি টি রোডের একাংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন হাওড়া স্টেশন থেকে বঙ্কিম সেতু হয়ে মহাত্মা গান্ধী রোড এবং জিটি রোড ঘুরে ফের বঙ্কিম সেতুতে উঠছে কলকাতাগামী বাস ।

যে জি টি রোড ২০১০ সাল থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় মেট্রোরেলের খোঁড়াখুঁড়ির জন্য এবং তখন থেকে শরৎ সদনের পাশের সরু রাস্তা দিয়ে বাস চলাচল শুরু করে। কিন্তু তাও বন্ধ করে দেয়া হয় কয়েক বছর আগে তখন থেকে বাস গুলি আর বঙ্কিম সেতু থেকে মহাত্মা গান্ধী রোডে না নেমে সরাসরি বঙ্কিম সেতু দিয়েই চলে যেত বঙ্গবাসী মোড়। সেখানেই সেতুর ডিভাইডারে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিত। এর ফলে দীর্ঘ গাড়ির লাইনে সর্বদাই যানজট লেগে থাকত হাওড়া ময়দানে। তার উপরে প্রাইভেট ট্যাক্সি, অটো, ঠেলা রিক্সা এসবের দৌরাত্ম্য তো ছিলোই।

একরকম যানজটে ভোগান্তিটাই একটা রুটিনে পরিণত হয়েছিল শহরবাসীর। তবুও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের স্বার্থে সেই যানজট মেনেও নিয়েছে শহরবাসী। তাই অফিস বেরোতে হতো হাতে একটু অতিরিক্ত সময় নিয়ে । কিছুদিন হল জি টি রোডের অনেকটা অংশ খুলে দেওয়ায় সেই যানজটের সমস্যা অবশ্য বেশ কিছুটা কমেছে। তবে তাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও অস্বস্তি বেড়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের। জি টি রোডের পাশের হকাররা এতদিন যেন ওত পেতে বসে ছিল ।কবে সরানো হবে মেট্রো প্রকল্পের অস্থায়ী টিনের পাঁচিল। এখন সেটা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে জি টি রোডের একাংশ দখল করে বসে পড়েছে হকার। ফলে পুরোপুরি মেট্রোর কাজ শেষ না হওয়ার আগেই হকারদের অনুপ্রবেশে মেট্রো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি শহরবাসীর কপালেও কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মেট্রো দুর্ভোগের পর হকারের দূর্ভোগে আবার ভুগতে হবে কিনা সেটাই ভাবছেন হাওড়া নাগরিকরা। যদিও হকারদের একাংশের বক্তব্য তারা সেখানে আগেও হকারি করতেন। মেট্রোর কাজের জন্য তারা জায়গাটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে হকার নিয়ন্ত্রণে হাওড়া সিটি পুলিশ সামান্য উদ্যোগ নিলেও জি টি রোডের নতুন খুলে দেওয়া অংশ থেকে হকারদের সরানো যায়নি।

43d6dc9d 415d 4ef8 be71 a221dbbb123a
হাওড়া ময়দান এর বাসিন্দা ভাস্কর রায় চৌধুরী বলেন, হাওড়ার উন্নয়নের স্বার্থে দুর্ভোগ একরকম তারা মেনে নিয়েছিলেন। এখন রাস্তা টি খুলে দেওয়া হয়েছে ।আবার আগের মত যান চলাচল করছে ।তাতে যানজট অনেকটাই কমেছে ।খুবই ভালো লাগছে এটা দেখে। অঙ্কিতা ঘোষ বলেন, মেট্রোর কাজের জন্য ময়দান বন্ধ থাকার ফলে বছরখানেক আগে বঙ্কিম সেতুর উপর রাস্তা পার হতে গিয়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়। সেটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা কিন্তু তার পরেও যে অবশেষে এই শহর ঝঞ্ঝাটমুক্ত হতে পারছে সেটা ভেবে স্বস্তি পাচ্ছে তারা। শরৎ সদনের পাশের রাস্তা খুলে দেওয়ায় বঙ্কিম ব্রিজের মুখেও এখন আর যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে না যাত্রীদের। স্বাভাবিকভাবেই এখন শুধু অপেক্ষা যে কবে সম্পূর্ণ খুলে দেয়া হবে হাওড়া ময়দান। ঝকঝকে সিঁড়ি বেয়ে পাতাল প্রবেশ করবে যাত্রীরা। তারপর গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো ছুটবে কলকাতার উদ্দেশ্যে। সেই রোমাঞ্চের সাক্ষী হওয়ার অপেক্ষায় এখন আপামর হাওড়াবাসী।


Udayan Biswas

সম্পর্কিত খবর