বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এল মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) রাজগড় থেকে। জানা গিয়েছে সেখানে একজন ব্যক্তি ইন্স্যুরেন্সের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধের জন্য নিজের স্ত্রীকে খুন করেছেন। এদিকে, সবচেয়ে অবাক করার মত বিষয় হল, স্ত্রীকে খুনের আগে ওই ব্যক্তি নিজেই তাঁর স্ত্রীর জন্য ৩৫ লক্ষ টাকার বীমা করিয়েছিলেন।
এই প্রসঙ্গে রাজগড় জেলার অতিরিক্ত এসপি মনকামনা প্রসাদ জানিয়েছেন যে, গত ২৬ জুলাই রাত ৯ টার দিকে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে। মূলত, স্বামী বদ্রীপ্রসাদের সাথে বাইকে করে যাওয়ার সময়ে ভোপাল রোডের মানা জোড় গ্রামের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পূজা মীনা (২৭)। এদিকে, এই ঘটনার পরে বদ্রীপ্রসাদ পুলিশকে মিথ্যে গল্প বানিয়ে জানিয়েছিলন যে, তিনি চারজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। যাঁরা সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিলেন তাঁকে। এমতাবস্থায়, বদ্রীপ্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী মীনা যখন জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ওই চারজন তাঁদের উপর হামলা চালিয়ে তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে পালিয়ে যান বলেও জানান তিনি।
এমতাবস্থায়, প্রথমদিকে ওই মহিলার স্বামীর বক্তব্যের ভিত্তিতে পুলিশ চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করলেও ঠিক তারপরেই আসল সত্যটি সামনে আসতে শুরু করে। জানা যায় যে, ওই মহিলা কয়েকদিন আগেই একটি বীমা করিয়েছিলেন। সেই তদন্ত করতে গিয়েই পুলিশ বুঝতে পারে যে, ওই মহিলার স্বামী বদ্রীপ্রসাদই হলেন আসল খুনি। এছাড়াও, পুলিশ তদন্তের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে যে, অভিযুক্ত প্রথমে স্ত্রীর জন্য বীমা করিয়েছিলেন এবং পরে সেই বীমার অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে হত্যা পর্যন্ত করেন।
এভাবেই হল রহস্যের উন্মোচন: পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই ব্যক্তি প্রথমে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর স্ত্রীকে সামনে থেকে গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে যে, ওই মহিলাকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এদিকে, বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকার কারণে পুলিশের সন্দেহ ঘনীভূত হয়। শুধু তাই নয়, এরপর পুলিশের হাতে আসে ওই চার অভিযুক্তের কল ডিটেইলস। যেখানে সেখা যায় যে, ওই ঘটনার সময় তাঁদের কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
এরপরে, পুলিশ যখন মৃতার স্বামীর কলের বিবরণ পরীক্ষা করে, তখন জানতে পারা যায় যে, ওই ব্যক্তি গত কয়েকদিন ধরে একটি নম্বরে ক্রমাগত কথা বলে আসছেন এবং ওইদিন রাতেও ওই নম্বরটি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। এরপর পুলিশের বারংবার জেরায় বদ্রী পুরো ঘটনাটি স্বীকার করেন। এই প্রসঙ্গে মনকামনা জানিয়েছেন, মৃতার স্বামী অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাঁর প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ঋণ ছিল। এই ঋণ শোধ করতে তিনি প্রথমে তাঁর স্ত্রীর জন্য ৩৫ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বীমা করিয়েছিলেন এবং তারপর ইন্টারনেটে ভিডিও দেখে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পাশাপাশি, ওই অভিযুক্ত তিন দুষ্কৃতীকে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে হত্যার জন্য সুপারি দেন। এমনকি, তাঁদের অগ্রিম ১ লক্ষ টাকা দিয়ে বলেছিলেন যে, তিনি বীমার টাকা থেকে বাকি টাকা দেবেন। ওই দিন রাতে বদ্রী রাস্তায় বাইক খারাপ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তাঁর স্ত্রীকে রাস্তার পাশে বসতে বলেন। সেই সময়ে পরিকল্পনামত ওই দুষ্কৃতীরা তাঁর স্ত্রীকে পেছন থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
দুই অভিযুক্ত গ্রেফতার: জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় অভিযুক্ত বদ্রী যুক্ত থাকার পাশাপাশি তাঁর সহযোগী অজয় ওরফে গোলু, শাকির ও হুনার সিং সামিল রয়েছেন। বর্তমানে কুড়াওয়ার পুলিশ অভিযুক্ত বদ্রীপ্রসাদ ও হুনার সিংকে গ্রেফতার করেছে। একই সঙ্গে ঘটনার সাথে যুক্ত থাকা শাকির ও গোলুর খোঁজ চলছে।