বাংলাহান্ট ডেস্ক : ইডি-সিবিআই এর মিলিত অভিযানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) বিপুল পরিমাণ বেনামি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে। দুজনেরই আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠদের নামেও পাওয়া গেছে বহু মূল্যের একাধিক সম্পত্তির খোঁজ। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) ফ্ল্যাট থেকে যখন ৫০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়, তখন বিরোধীদের অনেকেই অভিযোগ করেন এ টাকা তৃণমূলেরই (TMC)। অনেকেই আবার সরাসরি ওই টাকার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) যোগ আছে, এমনও দাবি করেন। এই সমস্ত অভিযোগের জবাব সোমবার মেয়ো রোডের মঞ্চ দিলেন মমতা। তাঁর দাবি, তিনি ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্যে দিয়েই এখনও জীবন কাটান। পরিবার তথা ভাই বোনেদের সম্পত্তি তাঁর নয়। ওই সম্পত্তিতে তাঁর কোনও অবদান বা অধিকার নেই।
ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মন্তব্য করেন, ‘আজ আমাকে একজন বলেছে, দিদি আপনার নামেও কেস করেছে। আপনার নাকি প্রপার্টি অনেক বেড়েছে! আমি তাঁকে বলেছি, এ সব গল্প কোথায় পায়?’ এ কথা বলেই, রামায়নের গল্প শোনান মমতা। আর তার মাধ্যমেই পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের তুলনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, ‘রাজা দশরথ একা ছিলেন। তাঁর চার ছেলে হয়। রাম বিয়ে করে, লক্ষ্ণণ বিয়ে করে। তাঁদেরও সন্তানা হয়। এভাবেই বংশ বৃদ্ধি পায়। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ২ বোন। বাবা মারা যাওয়ার পর একমাত্র মা আমার কাছে ছিল। মাও মারা গিয়েছে। আমার ভাই বোনেরা সবাই নিজেদের মতো আলাদা আলাদা থাকে। আমরা সম্পর্ক রাখি উৎসবে। রাখি বন্ধনের সম্পর্ক রাখি, ভাইফোঁটার সম্পর্ক রাখি, কালিপুজোয় সম্পর্ক রাখি।’
মমতা এই মন্তব্যের মাধ্যমে বোঝাতে চান যে কার্ত্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়দের যদি সম্পত্তি বৃদ্ধি পায় তা হলে সেই বৃদ্ধিকে মমতার সম্পত্তি বৃদ্ধি হিসাবে দেখা যাবে না। তাঁর ভাই বোনেরা স্বাধীন। প্রত্যেকে নিজেদের মতো জীবিকা নির্বাহ করে। তাঁদের সম্পত্তি বৃদ্ধির দায় মমতার নয়।
সম্পত্তির ব্যাপারে এই ব্যাখ্যা দেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সারাজীবনের ত্যাগ ও তিতিক্ষার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গত ১২ বছর প্রতিমাসে ১ লক্ষ টাকা করে আমার পেনশন পাওয়ার কথা ছিল। প্রাক্তন এমপি হিসাবে ওটা আমার প্রাপ্য। কিন্তু আমি পেনশন নিইনা। একবার হিসাব করে দেখুন ১২ বছরে কত টাকা হয়। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সব খরচ খরচা, বেতন ইত্যাদি মিলিয়ে মাসে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা আমার পাওয়ার কথা। কিন্তু এক পয়সাও আমি নিইনা। বাইরে গেলে এক কাপ চাও আমি নিজের টাকায় খাই। যে বাড়িটায় থাকি, সেটাও ঠিকা শর্তে। আমরা আইনত প্রজা। ওটা রানী রাসমনির জমি।
এর পরই মমতা বলেন, ‘বিজেপি কী ভেবেছে? পার্থ চ্যাটার্জির কেস হলেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবে, ববির ব্যাপার হলেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবে। কী ভেবেছ?’ পার্থ-অনুব্রত কাণ্ডে অনেকেই মমতাকে সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন তিনি সৎ। অন্যের দুর্নীতিতে তাঁকে টেনে আনা যাবে না। এমনই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।