বাংলা হান্ট ডেস্ক: আবাস যোজনার (Awas Yojana) ১৫ দফা শর্তকে ঘিরে ফের একবার সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। সম্প্রতি এই যোজনায় “দুর্নীতি”-র অভিযোগ তুলে রাজ্য বিজেপির নেতারা সরাসরি কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন। এমতাবস্থায়, কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে প্রথমে ৪৯৩ পাতার চিঠি পাঠানো হয়। তারপরেই পরিদর্শনে হাজির হয় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও। যদিও, জানা গিয়েছে পরিদর্শনের পর এই যোজনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো গরমিল মেলেনি।
এমনকি, শাসকদলের পক্ষ থেকে কটাক্ষের সুরে জানানো হয়েছে যে, বিজেপি নেতাদের এই সংক্রান্ত বেশিরভাগ নালিশই ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে, এই আবহেই গত শুক্রবারই আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যের একাধিক পদক্ষেপের প্রশংসা করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের উচ্চপদস্থ শীর্ষ আধিকারিক। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পরিদর্শনে আসা কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিদেরও একাংশ স্বীকার করে নিয়েছেন যে, প্রতিটি জেলায় আবাস যোজনাকে ঘিরে রাজ্যের কড়া পদক্ষেপের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
এদিকে, এই যোজনায় কেন্দ্রের নির্ধারিত শর্তগুলি মেনে বেশ কিছু নাম বাদ পড়েছে বলেও জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, আবাস যোজনায় কারা যোগ্য তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মোট ১৫ দফা শর্ত বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্র। পাশাপাশি, জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ওই ১৫ টি শর্তের মধ্যে যেকোনো একটি থাকলে সেক্ষেত্রে আবাস যোজনায় বাড়ি মিলবে না। এমতাবস্থায়, এই শর্তের পরিপ্রেক্ষিতেই এখন গোল বেঁধেছে। এমতাবস্থায়, এই শর্ত মেনে সাড়ে ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে বাছাই করেছে রাজ্য।
এমনকি, কেন্দ্রীয় দলের একাংশও এই শর্তের প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে। এমতাবস্থায়, পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘কেন্দ্রও জানে, ওই শর্তাগুলি অবাস্তব। সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মানতে গেলে একজনও বাড়ি তৈরির টাকা পাবেন না।’’ এদিকে, অভিযোগ উঠছে যে, দ্রুত উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করে আগামী মার্চের মধ্যে এই কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে রাজ্য। অন্যদিকে, একাধিক অজুহাতে কেন্দ্র এই প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চলুন জেনে নিই কি কি রয়েছে ওই ১৫ টি শর্তে:
১. পরিবারে অন্য কোনো সরকারি যোজনায় বাড়ি পেয়ে থাকলে এই যোজনায় তা উপলব্ধ হবে না।
২. পাকা বাড়ি থাকলে হবে না।
৩. পরিবারের যদি তিন বা চার চাকার ট্রাক্টর বা চাষের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রচালিত গাড়ি থাকে, সেক্ষেত্রে হবে না।
৪. পরিবারের ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি ঋণ পাওয়ার যোগ্য কিষান ক্রেডিট কার্ড থাকলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।
৫. বাইক, গাড়ি, যন্ত্রচালিত ভ্যান কিংবা মাছ ধরার ট্রলার থাকা চলবে না।
৬. পরিবারের কোনো সদস্যের বেতন ১০ হাজার টাকার বেশি হলে হবে না।
৭. নিজস্ব ফ্রিজ থাকলে হবে না।
৮. পরিবারের কেউ সরকারি চাকরি করলে এই সুবিধা মিলবে না।
৯. পরিবারের সরকারি নথিভুক্ত অ-কৃষি উদ্যোগ সংস্থা থাকলে হবে না।
১০. পরিবারের অন্তত ৭.৫ একর জমি অথবা সেচের কোনো ব্যবস্থা থাকলে এই যোজনার লাভ মিলবে না।
১১. পরিবারের ৫ একরের বেশি সেচযোগ্য জমি ও সেখানে দু’টি মরশুমে চাষ হয়ে থাকলে এই সুবিধা মিলবে না।
১২. পরিবারের যদি ২.৫ একরের বেশি সেচযুক্ত জমি ও সেচের কোনো ব্যবস্থা থাকে সেক্ষেত্রে এই যোজনার লাভ মিলবে না।
১৩. পরিবার বৃত্তি কর দিয়ে থাকলে হবে না।
১৪. আয়করের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
১৫. পরিবারে ল্যান্ডলাইন ফোন থাকলে হবে না।