২২ টাকার প্রথম রোজগার থেকে ৫ কোটি টাকার টার্নওভার, সবজি বিক্রি করে কোটিপতি IIM টপার

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্ক: উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জন করে ভালো চাকরি পাওয়ার ইচ্ছে সকলেরই থাকে। মোটা অঙ্কের রোজগারের মধ্য দিয়ে পরবর্তী জীবনযাত্রাকেও নিরাপদ করা যায় এর মাধ্যমে। কিন্তু, প্রতিটি ক্ষেত্রেই থাকে ব্যতিক্রম! আর সেই ব্যতিক্রমই তৈরি করে নতুন ইতিহাস!

বর্তমান সময়ে MBA একটি জনপ্রিয় এবং প্রচলিত ডিগ্রি। এর মাধ্যমে বড় কর্পোরেট হাউসে উচ্চ বেতনের চাকরি পাওয়া সহজ হয়ে যায়। ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে এই ডিগ্রি লাভের মধ্য দিয়ে সবাই চাকরিতে যোগদান করে আরামদায়ক জীবনযাপন করতে চান।

কিন্তু, এমনও কেউ কেউ থাকেন যারা চাকরির সুবর্ণ সুযোগ ছেড়ে দিয়ে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের কথা ভেবে কাজ করতে চান এবং তাঁদের উপযোগী ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা সেই রকমই একজন ব্যক্তির কথা তুলে ধরবো। বিহারের নালন্দা জেলার মহম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী কৌশলেন্দ্র কুমার তাঁর ভাইবোনদের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন।

তাঁরা বাবা-মা দুজনেই ছিলেন গ্রামের স্কুলের শিক্ষক। কৌশলেন্দ্র যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন তাঁকে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে নবোদয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি জুনাগড়ের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (গুজরাট) থেকে বি.টেক সম্পন্ন করেন।

সেখানে পড়াশোনাকালীন তিনি লক্ষ্য করেন যে, ওখানকার মানুষ বেশ বিত্তশালী। অপরদিকে, তাঁর গ্রামের “দিন আনা দিন খাওয়া” মানুষদের কথা ভেবে তাঁদের জন্য কিছু করার জেদ চেপে যায় কৌশলেন্দ্রর মনে। তখনই তিনি বিহারে এবং তাঁর গ্রামের মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। ২০০৩ সালে, বি.টেক পাশ করার পর তিনি মাসিক ৬,০০০ টাকার একটি চাকরি পান। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি ক্যাট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ফলাফল অনুযায়ী কৌশলেন্দ্র IIM আহমেদাবাদে স্বর্ণপদক পেয়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন।

এরপরই তিনি ২০০৭ সালে পাটনায় ফিরে আসেন এবং কৃষক ও বিক্রেতাদের সংযুক্ত করে একটি সংগঠিত সবজির ব্যবসার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি তাঁর ভাইয়ের সাথে “কৌশল্যা ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু টাকার অভাবে কৌশলেন্দ্রকে বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়।

এদিকে, এত শিক্ষিত অথচ বেকার হওয়ায় স্থানীয় কিছু মানুষ তাঁকে নিয়ে বিদ্রুপও করতেন। কিন্তু কৌশলেন্দ্র তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হননি। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি “সমৃদ্ধি” প্রকল্পটি চালু করেন। ধীরে ধীরে ২০ হাজারেরও বেশি কৃষক এই প্রকল্পের অধীনে যোগদান করেন এবং প্রায় ৭০০ জন এই কোম্পানিতে কাজ করেন।

কৌশলেন্দ্র বিহারে সবজি চাষি এবং বিক্রেতাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে “ফ্রম ফ্রেশ প্রোডাক্ট” (এফএফপি) রিটেল সাপ্লাই চেইন মডেল গ্রহণ করেন। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা কৃষকদের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহ করে বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। পাশাপাশি, এখানে কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়া হয়।

এছাড়াও, সবজির সতেজতা বজায় রাখার জন্য “কৌশল্যা ফাউন্ডেশন” পাটনা এবং নালন্দার সরু রাস্তার জন্য বরফের গাড়িও প্রস্তুত করেছে। ফাইবার দিয়ে তৈরি এই গাড়িতে ২০০ কেজি ওজন তোলার ক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি, এটিতে ইলেকট্রনিক স্কেলও রয়েছে। এর সাহায্যে সবজি ৫-৬ দিন সতেজ থাকে।

এই প্রসঙ্গে কৌশলেন্দ্র জানান যে, “আমি যখন পাটনার একটি স্কুলের পেছনে ছোট দোকান থেকে ব্যবসা শুরু করি, তখন প্রথম দিনের আয় ছিল ২২ টাকা। কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার সাথে, আজ কৌশল্যা ফাউন্ডেশনের বার্ষিক টার্নওভার ৫ কোটিতে পৌঁছেছে।” তাঁর এই প্রচেষ্টায় অনেক সামাজিক সংগঠন, কৃষি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাঙ্কও যোগদান করেছে।

পাশাপাশি, সমৃদ্ধি প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে, এতে জড়িত কৃষকদের আয় ২৫-৫০% বেড়েছে। এছাড়া সবজি বিক্রেতাদের আয় বেড়েছে ৫০-১০০%। বিক্রেতাদের গড় মাসিক আয় এখন ৮,০০০ টাকা ছুঁয়েছে। আগে যেখানে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হতো, এখন সেই সময় কমিয়ে ৮ ঘণ্টা করা হয়েছে। কৌশলেন্দ্র এই সাফল্যের জন্য তাঁর শিক্ষক এবং IIM-এর বন্ধুদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি, তিনি তাঁর মায়ের সাহস ও উৎসাহকে এই সাফল্যের মূলমন্ত্র বলেও মনে করেন।

Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

X