বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সন্দেশাখলির ‘বাঘ’ শেখ শাহজাহানের (Sheikh Shahjahan) বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ভুরি ভুরি। এর মধ্যে অন্যতম হল বলপূর্বক চাষের জমি নিয়ে নোনা জল ঢুকিয়ে তা মাছের ভেড়ি করে দেওয়া। এর ফলে চরম ক্ষতি হয়েছিল সেখানকার বাঁধের (Dam)। স্থানীয় বাসিন্দারা এই বিষয়ে একেবারে ভালোরকম অবগত ছিলেন। সেই কারণেই ঘূর্ণিঝড় রেমাল আসছে শুনে ভয়ে বুক কেঁপে উঠেছিল তাঁদের।
শেষ অবধি রেমাল (Cyclone Remal) গতিপথ পরিবর্তন করার সন্দেশখালি (Sandeshkhali) রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের মন থেকে ভয় যায়নি। আবার কবে ঝড় আসবে ঠিক নেই, তখন কী হবে? স্থানীয়দের কথায়, ‘আবার কবে যে ঝড় আসবে, আর বাঁধ ভেঙে যাবে, কে জানে’। জনপ্রিয় এক সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁরা বলেন, ‘শেখ শাহজাহান যে গোটা এলাকার কতখানি ক্ষতি করে গিয়েছে, সেটা শুধুমাত্র আমরা জানি’।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আসছে শুনে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। কারণ ভোট আসন্ন। এই অবস্থায় যদি বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে সকলের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাঁদের। এদিকে ২০০৯ সালের আয়লার তাণ্ডবের পর সুন্দরবনে কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তার কাজ খুব একটা এগোয়নি। এবার ভোটের মুখে যদি বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে পারে, এই ভেবে চিন্তায় পড়েছিলেন অনেকে।
আরও পড়ুনঃ রেমালের ‘খেল’ খতম! মঙ্গল থেকে ফের গরম দক্ষিণবঙ্গে, তাপপ্রবাহের সতর্কতা!
সুন্দরবন এলাকার এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘একেবারে ভোটের আগে যদি বাঁধ ভেঙে বড় রকমের কোনও বিপর্যয় ঘটতো, তাহলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। কিন্তু তেমন কিছু না ঘটায় খানিকটা নিশ্চিন্ত’। এদিকে রায়মঙ্গল নদীবাঁধের পাশেই থাকে একাধিক পরিবার। বিনয় সর্দার, সতীশ সর্দার, যদু খামরুদের বাড়ি সেখানেই। প্রত্যেকের কাঁচা বাড়ি।
সতীশ বলেন, ‘এই এলাকায় সারা বছরই বাঁধের অবস্থা খারাপ থাকে। রবিবার রাতে যখন জানতে পারলাম যে বাঁধ ভাঙেনি, তখন একটু স্বস্তি পেলাম’। তবে রেমালের থেকে রক্ষা পেলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখানে দ্রুত কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা প্রয়োজন। এলাকাবাসীদের একাংশ জানান, গত কয়েক বছরে তালতলা থেকে গোপালের ঘাট অবধি বেশ কয়েক কিমি নদীবাঁধের পাশে কিছু অসাধু মানুষ অবৈধভাবে মাছের ভেড়ি বানিয়েছেন। যে কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমনকি বাঁধে মাটি দিতে গেলে সেই মাটি পেতেও সমস্যা হয়।
এই প্রসঙ্গে মণিপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান প্রসেনজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রায় ৩ কিমি রায়মঙ্গল নদীবাঁধ কংক্রিটের করার কাজ চলছে। এখনও প্রায় ৯ কিমি রায়মঙ্গল নদীবাঁধ কংক্রিটের করা দরকার’। তাঁর সংযোজন, বাঁধের পাশে কিছু অসাধু মানুষ অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন। যে কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন প্রসেনজিৎ।
সেচ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদে যত নদীবাঁধ রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৬% থেকে ৭% কংক্রিটের। বাকি সবগুলি মাটির। পরিবেশ সুভাষ দত্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, কৃষিজমিতে মাছের চাষ করা একেবারেই বৈধ নয়। এর ফলে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।