কোনোভাবেই শ্বশুর-শাশুড়ির ভরণপোষণের দায়িত্ব বউমার নয়, বিরাট রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিজের বাড়ি ছেড়ে বিয়ের পর মেয়েদের ঠিকানা হয় শ্বশুরবাড়ি। সেখানে শ্বশুর-শাশুড়ি হলেন বাবা ও মা। তবে বউমারা কী কখনও ‘সন্তান’-এর মর্যাদা পান স্বামীর বাড়িতে গিয়ে? এই নিয়ে কথা বলতে গেলে বিস্তর বিতর্ক। তবে আইনের দৃষ্টিতে বউমা কিছুতেই শ্বশুর কিংবা শাশুড়ির ‘সন্তান’ হিসেবে বিবেচিত হন না। আইনি ভাষায় সন্তানের সংজ্ঞায় বৌমা ‘ফিট’ নন। তাই শ্বশুর-শাশুড়ির আর্থিকভাবে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ারও কোনো দায়বদ্ধতা বউমার নেই। ঠিক এই পর্যবেক্ষণই দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।

সম্প্রতি বয়স্ক ব্যক্তিদের আর্থিক ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত এক মামলায় এই কথাই বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ২০০৭ সালে পাশ হয় ‘দ্য মেন্টেইন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, বয়স্ক বাবা-মায়ের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসার দায়িত্ব বাধ্যতামূলকভাবে সন্তানকে নিতে হবে। তবে কোনো ভাবে নিজের সন্তানের অবর্তমানে কি সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হবে বৌমাকে?

সম্প্রতি বয়স্ক ব্যক্তিদের ভরণ-পোষণ সংক্রন্ত মেন্টেইন্যান্স ট্রাইব্যুনালের একটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন নদীয়ার তেহট্টের বাসিন্দা এক মহিলা। অভিযোগ, ২০১০ সালে তার শ্বশুর তার স্বামীর নামে একটি সম্পত্তি দানপত্র করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। আদালতে মামলাকারীর অভিযোগ, ২০২০ সালে তেহট্টের মহকুমা শাসকের কাছে ‘দ্য মেন্টেইন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট ২০০৭’-এর আওতায় ভরণ-পোষণের আবেদন জানান শ্বশুর।

ওই একই বছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। এদিকে শ্বশুরের দানপত্র করা ওই সম্পত্তিটি তার নামে আগেই মিউটেশন হয়ে গিয়েছিল। তবে শ্বশুরের আবেদনের ভিত্তিতে মেন্টেইন্যান্স ট্রাইব্যুনাল, বউমাকেই শ্বশুর-শাশুড়ির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বৌমা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে নিজের বেতন থেকে প্রতি মাসে ভরণ-পোষণ বাবদ ২ হাজার টাকা শ্বশুরকে দিতে হবে।

আরও পড়ুন: ফের কথা রাখছেন মমতা! একগুচ্ছ সরকারি পরিষেবায় উপকৃত হবেন ২০ হাজার, কারা পাবেন?

একই সাথে আগে দানপত্র করা সম্পত্তিটিও বৌমা বিক্রি করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। মেন্টেইন্যান্স ট্রাইব্যুনালের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। তার অভিযোগ, ট্রাইব্যুনালের দেওয়া নির্দেশ ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত আইন বিরোধী। আদালতে মামলা উঠলে রাজ্যের তরফেও এই বক্তব্যের বিরোধিতা করা হয়নি। সব শুনে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।

Calcutta High Court

মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে। তিনি জানান, মেন্টেইন্যান্স আইন অনুযায়ী নিজের ছেলে, মেয়ে (পালিত সন্তান) এবং নাতি-নাতনিকে ‘সন্তান’ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই বয়স্ক ব্যক্তিদের ভরণ-পোষণের দায়িত্বও তাদেরই। শ্বশুর-শাশুড়ির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কোনোভাবেই বৌমার নয়। যদিও মামলাটির নিষ্পত্তি করেনি হাইকোর্ট। ভবিষ্যতে মানবিক দিক থেকে এই আইনের পরিবর্তন করা যায় কি না সেই বিষয়ে বিবেচনা করা হতে পারে।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর