বাংলাহান্ট ডেস্ক : ছেলে ঠিক নিজেই ফিরে আসবে। অতনু দে এবং অভিষেক নস্করের দেহের খুঁজে পাওয়ার আগের রাতেও পরিবারকে ওই কথা জানায় (Baguiati Double Murder) বাগুইআটি থানা। তারপরই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
আইন অনুযায়ী, কোনও নাবালক নিখোঁজ হলে পুলিশ যদি তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করতে না পারে, তাহলে স্বতঃপ্রণোদিত অপহরণের মামলা দায়ের করতে হয়। কিন্তু তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না বলে জানা যাচ্ছে। তবে জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করা শিশুদের তুলনায় সংখ্যা বেশি, যারা নিজেরাই বাড়ি থেকে পালায়।
গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে থেকে ৬ হাজার ২১৭টি শিশু নিজেরাই বাড়ি ছেড়েছে। ১ হাজার ৫৩৬ জন পালিয়ে গেছে। এবং ১৯৮ জনকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা রাগ করে নিজেরাই বাড়ি ছেড়ে পালায়। তাই বাবা–মা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায়না। কিন্তু বাড়ি থেকে রাগ করে বা অন্য কোনও কারণে পালিয়ে গেলেও খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশেরই।
বাগুইআটির (Baguiati Double Murder) জোড়া খুনেও ওই দুই ছাত্রের বাবা–মা মনে করেছিলেন, তাঁদের ছেলেরা ঠিক বাড়ি ফিরে আসবে। পুলিশও নিখোঁজ ডায়েরি করতে গেলে, তেমনটাই বলে। তবে আইন অনুযায়ী, খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশেরই ছিল। নাবালক ছেলে–মেয়ে নিজের ইচ্ছেয় বাড়ি ছেড়েছে, বা কেউ নিয়ে গেছে, সেটা কোনও ব্যাপার নয়। পুলিশকেই তার দায়িত্ব নিতে হবে, এমনই দাবি শিশু সুরক্ষা কমিশনের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অপরাধ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের হুঁশ ফেরে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে বন্ধুর সঙ্গে পালানোর পর পাচারের শিকার হওয়ার ঘটনার সংখ্যাও অনেক।
পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজ্য থেকে ২২ হাজার ৯২৮ জনকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিখোঁজ ৪ হাজার ৭৪০ জন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (National Crime Records Bureau (NCRB) তথ্য অনুযায়ী এরাজ্যে ওই সময়ে অপহৃতদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই শিশু। যার মোট সংখ্যা ১৭ হাজার ১৬৯ জন।