বাংলা হান্ট ডেস্ক: আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরেই মহাসমারোহে দেশজুড়ে পালিত হবে স্বাধীনতা দিবস (Independence Day)। এদিকে, চলতি বছরে স্বাধীনতা দিবস পা দিল ৭৫ বছরে। যার ফলে একাধিক কর্মসূচি ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে। পাশাপাশি উত্তেজনাও রয়েছে তুঙ্গে। কিন্তু, বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের সামনে এমন একটি বিষয়ের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব, যেটি জেনে রীতিমতো অবাক হবেন সকলে ।
দেশের প্রতিটি প্রান্তে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হলেও আমাদের রাজ্যেই এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ঠিক তার তিন দিন পর অর্থাৎ, ১৮ আগস্টে। হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি। আর এই ঘটনার পেছনে রয়েছে এক বিরাট ঐতিহাসিক কারণও।
মূলত, বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ ও তীব্র বিদ্রোহের কারণে একটা সময়ে ব্রিটিশ সরকার ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও, নিজেদের শাসন শেষ করার আগে দেশ বিভাজনের মত বড় সিদ্ধান্তও নেয় তারা। শুধু তাই নয়, স্যার র্যাডক্লিফ কমিশন বানিয়ে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের দায়িত্ব নেন। এমতাবস্থায়, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে অল ইন্ডিয়া রেডিওর একটি খবর হঠাৎ করেই বদলে দেয় সবকিছু।
কারণ, সেই রেডিও বার্তায় স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে, নদিয়া জেলার বেশ খানিকটা অংশ স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত থাকছে না। বরং তা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও, এই খবর রেডিওতে প্রচারিত হতেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সমগ্ৰ নদিয়া জুড়ে। মিছিল, মিটিং, ধর্মঘটের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। মূলত, ওই বিভাজনের নিরিখে নদিয়ার শুধুমাত্র নবদ্বীপের অংশটুকু ভারতবর্ষের অধীনে থাকে। এমনকি, শিবনিবাস সহ কৃষ্ণনগর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে যা বাংলাদেশ) মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। এদিকে, এই ঘোষণার পরেই ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মুসলিম লীগ কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে।
এমতাবস্থায়, সম্মিলিত বিদ্রোহের প্রভাবে টনক নড়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের। শুধু তাই নয়, সরকার তার ভুল বুঝতে পেরে ১৭ আগস্ট একটি সংশোধনী ঘোষণা করে। যেখানে জানিয়ে দেওয়া হয়, কৃষ্ণনগর, শিবনিবাস ও রানাঘাট ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এমতাবস্থায়, নতুন এই ঘোষণার পর তার পরের দিন অর্থাৎ ১৮ আগস্ট কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে সেখানে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
আর এই কারণেই ১৮ আগস্ট দিনটি শিবনিবাস, রানাঘাট বা শান্তিপুরের মতো জায়গায় যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। পাশাপাশি, ওই দিন পতাকা উত্তোলনও করা হয়। এছাড়াও, এই বিশেষ দিনটিকে পালনের জন্য আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চূর্ণী নদীতে মহিলাদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।