বাংলা হান্ট ডেস্ক: যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে সামরিক দিক থেকে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে ভারত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সেরা ৫ টি শক্তিশালী বিমান বাহিনীর মধ্যেও ভারত স্থান করে নিয়েছে। প্রায় ১,৭৫০টি বিমান এবং প্রায় ৯০০ টি যুদ্ধবিমানের বহর রয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF) কাছে। আর এইভাবেই ভারত বর্তমানে শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (Air Defence System) তৈরি করেছে। যার মধ্যে দেশে তৈরি এবং আমদানি করা সিস্টেমও রয়েছে। যেগুলি শত্রুবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে ড্রোন এবং বিমানকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করছে। যার মধ্যে লং-রেঞ্জ মিসাইল থেকে শুরু করে শর্ট-রেঞ্জ সিস্টেম এবং মোবাইল এয়ার ডিফেন্স গান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (Air Defense System):
১. দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: এই ব্যবস্থাগুলি শত্রুপক্ষের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানকে দীর্ঘ দূরত্বে প্রতিহত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (PAD): যার মধ্যে রয়েছে পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (PAD)। এটির রেঞ্জ ৩০০ থেকে ২০০০ কিমি। শব্দের গতির তুলনায় ৫ গুণ বেশি গতিযুক্ত এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের রাডার একবারে ২০০ টি লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করে।
অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (AAD): এছাড়াও রয়েছে অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (AAD)। এটি বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে বাধা দেয় এর রেঞ্জ ২০০ কিমি পর্যন্ত। গতি ম্যাক ৪.৫। যখন PAD কোনও লক্ষ্যবস্তু মিস করে তখন এটি ব্যবহৃত হয়।
২. মাঝারি এবং স্বল্প-পাল্লার মিসাইল সিস্টেম: এগুলি শত্রুপক্ষের বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সামরিক ঘাঁটি এবং শহরগুলিকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
আকাশ মিসাইল সিস্টেম: এটির রেঞ্জ ৪৫ কিমি পর্যন্ত। পাশাপাশি গতি ম্যাক ৩.৫। DRDO দ্বারা তৈরি এই সিস্টেম
সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনী উভয় দ্বারা ব্যবহৃত হয়। জেট, ড্রোন এবং ক্রুজ মিসাইলকে টার্গেট করতে পারে।
SPYDER এয়ার ডিফেন্স (ইজরায়েল থেকে): এটি পাইথন-৫ এবং ডার্বি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এর রেঞ্জ ২০ থেকে ৫০ কিমি। লো ফ্লাইং এয়ারক্রাফট এবং ড্রোন ধ্বংস করতে পারে।
2K12 Kub (Kvadrat): এটি হল সোভিয়েত অরিজিন সিস্টেম। এর রেঞ্জ ২৪ কিমি। ১৪ কিমি পর্যন্ত উচ্চতায় কাজ করতে সক্ষম।
বারাক ৮ (ভারত-ইজরায়েল যৌথ উদ্যোগ): এটির রেঞ্জ ১০০ কিমি পর্যন্ত। সেনা, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত হয়। চিনের হুমকি মোকাবিলায় লাদাখে মোতায়েন করা হয়েছে।
QRSAM (কুইক রিয়েকশন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল): এটির রেঞ্জ ৩ থেকে ৩০ কিমি। এটি ফাস্ট রেসপন্স সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত হয়। লাদাখের মতো অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত করার জন্য এগুলি ট্রাকে স্থাপন করা থাকে।
৩. লিগ্যাসি এবং পুরোনো সিস্টেম: এগুলি হল পুরনো সিস্টেম যা এখনও কম সংখ্যায় বা ব্যাকআপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
S-125 পেচোরা: এটি হল একটি সোভিয়েত সিস্টেম। যার রেঞ্জ ৩০ কিমি। এগুলি IAF স্কোয়াড্রন দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
9K33 Osa-AK: এটি হল মোবাইল লঞ্চার সিস্টেম। যার রেঞ্জ ১৮ কিমি পর্যন্ত।
৪. ভেরি শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (VSHORAD): এগুলি স্থল সেনাদের বিমান আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন: আরও বাড়ল পাকিস্তানের চাপ! ভারতের পাশে দাঁড়াল এই মুসলিম দেশ, কী জানালেন জয়শঙ্কর?
9K35 Strela-10: এটির রেঞ্জ ৫ কিমি। যেগুলি হিট-সিকিং মিসাইল ব্যবহার করে
2K22 Tunguska: এই সিস্টেম বন্দুক এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এছাড়, সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের মাধ্যমে এগুলি স্থানান্তরিত করা হয়।
ZSU-23-4 Shilka: এটি হল রাডার-নির্দেশিত গান। বর্তমানে অল্প সংখ্যায় ব্যবহৃত হয়।
ZU-23-2: এগুলি হল টুইন-ব্যারেল বন্দুক। যেগুলি বিমান-বিধ্বংসী গান হিসেবে ব্যবহৃত
বোফর্স ৪০ মিমি বন্দুক: এগুলির রেঞ্জ ১২.৫ কিমি পর্যন্ত। এটি ব্যবহৃত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা।
KPV হেভি মেশিনগান: এটি হল বিমান-বিধ্বংসী এবং যানবাহন-বিধ্বংসী সিস্টেম। লার্জ-ক্যালিবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
আরও পড়ুন: “অপারেশন সিঁদুর”-এর পরেই পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাবর্ষণ! মৃত ১৫ জন সাধারণ নাগরিক, আহত ৪৩
৫. ভারতের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র: জানিয়ে রাখি যে, ভারত এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে কাজ করছে যা শব্দের ৫ গুণ বেশি গতিতে যেতে পারে (ম্যাক ৫)। এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ১৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং এগুলিকে তাদের গতি এবং কম উচ্চতার কারণে থামানোও কঠিন।
৬. আকাশ মিসাইল সিস্টেম ব্যবস্থা: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আকাশ ভারতের সর্বাধিক ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা (Air Defense System) এবং এটি একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে দেখা হয়।
এটি মূলতDRDO, BEL এবং BDL দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। যেটির লক্ষ্যবস্তু যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র। এই সিস্টেম একসাথে ৬৪টি লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করতে পারে এবং ১২ টি ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা করতে পারে
আকাশের বিভিন্ন ধরণ:
আকাশ-১এস: এটির রেঞ্জ ১৮ থেকে ৩০ কিমি। যেটি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে কাজ করে।
আকাশ-এনজি: এটির রেঞ্জ ৭০ কিমি-এর বেশি। অপেক্ষাকৃত হালকা। নির্ভুলভাবে এবং দ্রুততার সাথে কাজ করতে সক্ষম। ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের বিরুদ্ধে উন্নত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
আকাশ বনাম পাকিস্তানি হুমকি: জানিয়ে রাখি যে, পাকিস্তান F-16-এর মতো জেট এবং TB2-এর মতো ড্রোন ব্যবহার করে। অপরদিকে, আকাশ শক্তিশালী রাডার এবং বিস্ফোরক ওয়ারহেড ব্যবহার করে দীর্ঘ পরিসরে এগুলি থামাতে পারে। ২০২৩ সালের মহড়ায়, আকাশ একবারে ৪ টি ড্রোনকে মাটিতে নামিয়েছিল।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আকাশকে ট্রাকের মাধ্যমেসহজেই স্থানান্তর করা যায়। এটি জম্মু, পাঞ্জাব এবং লাদাখের মতো সংবেদনশীল সীমান্তের কাছে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি এই সিস্টেম S-400 এবং বারাক ৮-এর মতো অন্যান্য সিস্টেমের সাথে ভালোভাবে কাজ করে।
উৎপাদন এবং রফতানি: ভারত প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে। ইতিমধ্যেই
আর্মেনিয়ায় ৭২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত ৩৪,০০০ কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় করেছে।
দেখুন গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও: