বাংলা হান্ট ডেস্ক: আপাতত আমাদের দেশে নিজস্ব কোনো বোমারু (Bomber) বিমান নেই। মূলত, এই বিমানগুলি বহুদূর পাড়ি দিয়ে শত্রুপক্ষের এলাকায় বড় বোমা ফেলে ফিরে আসতে পারে। পাশাপাশি এগুলি হাইপারসনিক, ক্রুজ এবং সুপারসনিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় মনে করা হচ্ছে যে, এবার ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বোমারু বিমান আমদানি করতে পারে। এমনকি, রাশিয়ার সঙ্গে S-400 বিমান প্রতিরক্ষা চুক্তি সফল হওয়ার পর এই চুক্তিটিও সম্পন্ন হতে পারে।
সম্প্রতি চাণক্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত চাণক্য ডায়ালগস প্রোগ্রামে প্রাক্তন এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা এই প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করেন। ভারত কার্নাড নামে এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন বলে জানা গিয়েছে। পরবর্তীকালে আরও কিছু প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এই প্রসঙ্গে টুইট করেছেন। এমতাবস্থায়, যে বিমানটিকে নিয়ে আলোচনা চলছে সেই Tupolev Tu-160 Black Jack Bomber-এর বিশেষত্ব আপনাদের কাছে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত করা হল।
Tu-160 বোমারু বিমানটি হোয়াইট সোয়ান (White Swan) নামেও পরিচিত। যদিও, ন্যাটোতে এর রিপোর্টিং নাম ব্ল্যাক জ্যাক। এটি একটি সুপারসনিক ভেরিয়েবল সুইপ উইং হেভি স্ট্র্যাটেজিক বোমারু বিমান। এটির নকশা ১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের টুপোলেভ ডিজাইন ব্যুরো তৈরি করেছিল। পাশাপাশি, এই বিমানের প্রথম উড়ান সম্পন্ন হয় ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে। অপরদিকে, ১৯৮৭ সাল থেকে এটি ক্রমাগত রাশিয়ান অ্যারোস্পেস ফোর্সে মোতায়েন করা হয়েছে।
Tu-160 Blackjack বোমারু বিমানের ৯ টি পরীক্ষামূলক বিমান তৈরি করা হয়েছিল। এরপর আরও ২৭ টি ইউনিট করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে, রাশিয়ান বিমান বাহিনীর লং রেঞ্জ এভিয়েশন শাখায় মোট ১৬ টি বিমান উপস্থিত রয়েছে। এমতাবস্থায়, রাশিয়া তার সেনাবাহিনীতে আরও ৫০ টি নতুন Tu-160M বোমারু বিমান যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে।
জানা গিয়েছে এই বিমানটিকে পরিচালনা করতে মোট চারজনের প্রয়োজন হয়। এতে একজন পাইলট, একজন সহ-পাইলট, একজন বোম্বরার্ডার এবং একজন প্রতিরক্ষামূলক সিস্টেম অফিসার থাকে। এই বিমানটি ১৭৭.৬ ফুট লম্বা। পাশাপাশি, এর ডানার বিস্তার ১৮২.৯ ফুট। এছাড়াও, এটির উচ্চতা হল ৪৩ ফুট। খালি বিমানটির ওজন ১.১০ লক্ষ কেজি। যেখানে টেকঅফের সময় সর্বোচ্চ ওজন ২.৭৫ লক্ষ কেজি পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
Tu-160 Blackjack বোমারু বিমান প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২,২২০ কিলোমিটার গতিতে ৪০,০২৬ ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে। তবে সাধারণত এটি ঘণ্টায় ৯৬০ কিলোমিটার বেগে ওড়ে। সর্বোপরি, এটি একবারেই ১২,৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। জানিয়ে রাখি যে, যুদ্ধের সময় এর কমব্যাট রেঞ্জ হল ২,০০০ কিমি। যা সাবসনিক গতিতে ৭,৩০০ কিমি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি, এটি সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে।
India may go for Tu 160 Black Jack bomber from Russia. Tu 160 is more of a stand-off Weapon Platform. India will develop a Hypersonic Glide Vehicle for nuclear delivery from Tu 160.
Source : Bharat Karnad pic.twitter.com/7Igyawwwla— Varun Karthikeyan (@Varun55484761) August 7, 2022
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, Tu-160 Black Jack বোমারু বিমানে ঠিক কত ধরণের বোমা লোড করা যায় সেই প্রসঙ্গে কোথাও কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু জানা গিয়েছে এই বিমান প্রায় ৪৫ হাজার কিলোগ্রাম ওজনের বোমা নিয়ে উড়তে পারে। এছাড়া এর ভিতরে রয়েছে দু’টি রোটারি লঞ্চার। প্রতিটি লঞ্চার ৬ টি raduga kh55sm/101/101/555 ক্রুজ মিসাইল বা 12 AS-16 কিকব্যাক শর্ট রেঞ্জ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ করতে পারে। এখন বিষয় হল, এটি ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দিলে কয়েক মিনিটের মধ্যে দেশের যেকোনো কোণায় পৌঁছে যাবে। এছাড়াও, যদি একটি পারমাণবিক অস্ত্রযুক্ত সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বা হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল এতে স্থাপন করা হয়, সেক্ষেত্রে এটি শত্রুকে কার্যত ধ্বংস করে দেবে। কারণ এর ফলে এটির ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসর বৃদ্ধি পাবে।