বাংলাহান্ট ডেস্ক : একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একবার সাক্ষাতের জন্য জোরাজুরি করছেন মহম্মদ ইউনূস। অন্যদিকে তলে তলে ঠিকই চিন-পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে চলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশে পালাবদল হওয়ার পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের ভারত (India) বিরোধী মনোভাব বারংবার প্রতিফলিত হয়েছে। নয়াদিল্লির তরফে নরমে গরমে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ঢাকাকে। কিন্তু কে কার কথা শোনে! সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর পূর্বের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে ইউনূসের মন্তব্যের পরেই অ্যাকশন মোডে গেল নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ করল ভারত (India) সরকার।
ইউনূসের মন্তব্যের জেরে বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা ভারতের (India)
প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের (India) সম্পর্ক বরাবরই ভালো থেকেছে। দু দেশের মধ্যেই পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্কও মজবুত থেকেছে। এই সম্পর্কের উপরে ভিত্তি করেই ২০২০ সালে ভারত (India) এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের মাটি ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য করার একগুচ্ছ সুবিধা প্রধান করা হয়েছিল। কিন্তু এবার সে সব সুবিধায় ‘কাঁচি’ চালাল ভারত (India)। মঙ্গলবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের ২৯ শে জুনের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকেই কার্যকর করা হচ্ছে এই নির্দেশ।
চুক্তিতে কী ঠিক হয়েছিল: এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শুল্ক বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে বাণিজ্যের জন্য ভারতের (India) বন্দর এবং বিমানবন্দর আর ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ। এমনকি সীমান্ত পেরিয়ে ট্রাক, কন্টেনারও আর প্রবেশ করা যাবে না। অর্থাৎ সোজা ভাষায় বলতে গেলে, ভারতের (India) মাটি ব্যবহার করে আর অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে না ইউনূসের দেশ। মূলত এই চুক্তির সাহায্যে ভারতের মধ্যে দিয়ে নেপাল, ভুটান, মায়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা চালাত বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত চুক্তি বাতিল করতে যে এই ব্যবসায় বড় মার খেতে চলেছে প্রতিবেশী দেশ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু হঠাৎ চুক্তি বাতিল করলই বা কেন দিল্লি? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, চিন সফরে ইউনূসের সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্যই যত নষ্টের গোড়া।
আরো পড়ুন : কৃষি উন্নতিতে বড় সিদ্ধান্ত সরকারের, পানাগড়ের নতুন কারখানায় পড়ল শিলমোহর
কী মন্তব্য করেছেন ইউনূস: সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে ভারতের (India) উত্তর পূর্বের ‘সেভেন সিস্টার্স’ অর্থাৎ অরুণাচল প্রদেশ, অসম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর এবং মেঘালয়কে নিয়ে মন্তব্য করেন মহম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ওই সাতটি রাজ্য স্থলভাগ এবং পাহাড়ে ঘেরা। সমুদ্র পথে যোগাযোগ করার উপায় নেই তাদের। এদিকে বাংলাদেশ হল সমুদ্র পথের রাজা। তাই ওই এলাকায় চিনা অর্থনীতি বিস্তার ঘটাতেই পারে। ইউনূসের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, সেভেন সিস্টার্সকে ভেঙে ফেলার চিনের যে বহু পুরনো ইচ্ছা, তাতে একশো ভাগ সায় রয়েছে বাংলাদেশের। ইউনূসের এই মন্তব্যের পরেই এবার তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি।
আরও পড়ুন : বাংলায় লাগু হবে না ওয়াকফ? “দিদি”-র ওপরে ভরসা রাখার জন্য সংখ্যালঘুদের কাছে আর্জি মমতার
ভারত (India) বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের বিষয়ে অবশ্য ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন এর ডিরেক্টর জেনারেল। তাঁর মতে, আগে বাংলাদেশকে জায়গা দিতে গিয়ে ভারতের জায়গা কম পড়ত। কিন্তু এবার আখেরে লাভই হবে ভারতের।