বাংলাহান্ট ডেস্ক: গোটা বিশ্বই এখন ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানীর (fossil fuel) পরিবর্তে অন্যান্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। ফলে গাড়ির বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ির (electric cars) চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই ইলেকট্রিক গাড়ির জ্বালানির উৎস হল লিথিয়াম (Lithium), তা এগুলির ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতিই জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu & Kashmir) হিমালয়ের গর্ভে ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়ামের হদিস পেয়েছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (Geological Survey of India)। ফলে ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুত করার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেল ভারত (India)।
উল্লেখ্য, ভারতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম লিথিয়াম ভাণ্ডারের খোঁজ মিলেছে। এর আগে রয়েছে শুধু চিলি (Chile) ও অস্ট্রেলিয়া (Australia)। লিথিয়াম হল ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির মূল উপাদান। তবে এই ব্যাটারি শুধু ইলেকট্রিক গাড়িতেই নয়, মোবাইল, ল্যাপটপের ব্যাটারিতেও ব্যবহৃত হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বার হয়তো খানিকটা কমতে পারে ইলেকট্রিক গাড়ির দাম। কারণ পুরোপুরি স্বদেশে উৎপাদন হলে ব্যাটারি জাতীয় জিনিস আমদানি করতে হবে না।
তথ্য অনুসারে, এই মুহূর্তে ভারতের লিথিয়ামের চাহিদার ৯৬ শতাংশই আমদানিকৃত। ফলে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় ভারতকে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি (Lithium ion battery) আমদানির পিছনে ৮৯৮৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। এরপর ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই খরচ বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। এখন চিন ও হংকং (Hong Kong) থেকে সবচেয়ে বেশি লিথিয়াম আমদানি করে ভারত।
প্রতি বছর আমদানির পরিমাণও বেড়ে চলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চিন থেকে ৮০ শতাংশ লিথিয়াম আমদানি করে ভারত। কিন্তু এখন চিনের থেকেও চার গুণ বেশি লিথিয়াম ভাণ্ডার রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের ওই খনিতে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লিথিয়াম ভাণ্ডার রয়েছে চিলির কাছে। তাদের কাছে ৯৩ লক্ষ টন লিথিয়াম মজুত রয়েছে। এরপর রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের কাছে ৬৩ লক্ষ লিথিয়াম মজুত রয়েছে।
কাশ্মীরে এত বিপুল সংখ্যক লিথিয়াম মেলার ফলে ভারত উঠে এসেছে তিন নম্বরে। এরপর রয়েছে আর্জেন্টিনা (Argentina)। তাদের কাছে রয়েছে ২৭ লক্ষ টন লিথিয়াম। চিন রয়েছে পঞ্চম স্থানে। তাদের কাছে ২০ লক্ষ টন লিথিয়াম রয়েছে। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে আমেরিকা। তাদের কাছে আছে ১০ লক্ষ টন লিথিয়াম। ভারতে এই লিথিয়াম মেলার ফলে এটি দেশকে আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। ইতিমধ্যেই আর্জেন্টিনা, চিলি, অস্ট্রেলিয়া ও বলিভিয়ার খনিগুলিতে শেয়ার কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত।
বিভিন্ন আফ্রিকার (Africa) দেশ ভারতের থেকে ঋণ নিয়েছিল। তার পরিবর্তে তারা তাদের খনি ব্যবহার করতে দিচ্ছে ভারতকে। তবে লিথিয়াম থেকে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তৈরি করা সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। তবে দেশে লিথিয়ামের মজুত মেলায় ব্যাটারিও দেশেই তৈরি করা যাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি, ৭০ শতাংশ বাণিজ্যিক গাড়ি ও ৮০ শতাংশ দু’চাকার গাড়িকে ইলেকট্রিক করতে চায় ভারত।
সে জন্য দেশে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উৎপাদন বাড়াতে হবে। এর জন্য চিনের থেকে শিখতে হবে ভারতকে। বর্তমানে বিশ্বের মোট লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ৭৭ শতাংশ করে চিন। কিন্তু এখানে পৌঁছনোর পরিকল্পনা ২০০১ সালেই করে ফেলেছিল চিন। ২০০২ থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যে বিনিয়োগ করেছিল তারা। শুধু কারখানা তৈরিতেই নয়, কাঁচামাল যাতে কম না পড়ে তার ব্যবস্থাও করেছিল তারা। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন খনিতে বিনিয়োগ করেছিল চিন।
আমেরিকার পর ভারতেই সবচেয়ে বেশি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আমদানি করা হয়। ভারতে প্রায় ১.৫৪ লক্ষ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আমদানি করা হয়েছিল। মূলত চিন, জাপান ও ভিয়েতনাম থেকেই আমদানি করে ভারত। তবে এ বার আত্মনির্ভর হতে গেলে ভারতকে একটি প্রযুক্তি তৈরি করতে হবে। যাতে তারাও দেশেই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন করতে পারে। ২০৩০-এর লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে বছরে ১ কোটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন করতে হবে।