চরম সত্য! দারিদ্রতার বিচারে নাইজেরিয়াকে পিছনে ফেলে দিল ভারত, অপুষ্টিতে ভুগছে ১৯ কোটি মানুষ

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্ক: দারিদ্রতার (Poverty) বিচারে এবার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল আমাদের দেশে। এমনিতেই, বিশ্বের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলির প্রসঙ্গ উঠলেই সবার প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার সোমালিয়া, নাইজেরিয়ার মত একাধিক দেশের নাম উঠে আসে। কিন্তু, জেনে অবাক হবেন যে, গত কয়েক বছরে ভারত (India) এতটাই দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে যে, সেই দেশগুলিকেও দারিদ্রতার নিরিখে পেছনে ফেলে দিয়েছি আমরা। এখনও পর্যন্ত, মনে করা হত যে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বসবাস করেন নাইজেরিয়ায়। কিন্তু সেই তালিকায় এখন ভারত চলে এসেছে। অর্থাৎ, বর্তমান সময়ে ভারতেই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বসবাস করেন।

এই প্রসঙ্গে “বিজনেস ইনসাইডার আফ্রিকা”-তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এখনও পর্যন্ত আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াকে বিশ্বের “পোভার্টি ক্যাপিটাল” (গরিবদের রাজধানী) হিসেবে বিবেচনা করা হত। কারণ, সেখানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দরিদ্রদের বসবাস ছিল। কিন্তু “ওয়ার্ল্ড পোভার্টি ক্লক”-এর নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী সামনে এসেছে যে, ভারত এখন দরিদ্র মানুষদের উপস্থিতির ভিত্তিতে নাইজেরিয়াকেও পিছনে ফেলেছে। নতুন তথ্য অনুসারে, ভারতে ৮৩ মিলিয়ন মানুষ ২০২২ সালে জাতিসংঘের আনুমানিক দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছেন।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে নাইজেরিয়ার জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নাইজেরিয়ায় ৮,৩০,০৫,৪৮২ জন মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছেন। যেখানে, ভারতে এই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৮,৩০,৬৮,৫৯৭-তে। এমতাবস্থায়, যদি আমরা জনসংখ্যার শতাংশের দিকে তাকাই, তবে বিশ্বের দরিদ্র জনসংখ্যার সর্বোচ্চ অংশ উভয় দেশেই ১২.২ শতাংশের সমান। কিন্তু যেহেতু ভারতের জনসংখ্যা বেশি, তাই সবচেয়ে বেশি দরিদ্রের সংখ্যাও ভারতে রয়েছে। এদিকে, করোনা মহামারীর পরে, এই পরিসংখ্যান আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাশাপাশি, ২০২০ সালের “স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড”-এর রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ১৮.৯২ কোটি মানুষ সেই সময়ে অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। এছাড়াও, একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ভারতে প্রতি বছর ২৫ লক্ষ মানুষ অনাহারে প্রাণ হারান। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের রিপোর্টে ভারতের স্কোর হল মাত্র ২৭.৫। যা সামগ্রিকভাবে খুবই খারাপ পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে।

এছাড়াও, সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই) এবং ডাউন টু আর্থ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন ভারতীয়র কাছে পুষ্টিকর খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় সামর্থ্য নেই। এদিকে, গত এক বছরে কনজিউমার ফুড প্রাইস ইনডেক্স (সিএফপিআই) অনুযায়ী, খাদ্যের দামের ক্ষেত্রে বিরাট বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি, বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

এমতাবস্থায়, ভারত ২০২১ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ১০১ তম স্থানে ছিল। এছাড়াও, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩১ তম স্থানে রয়েছে। পাশাপাশি, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ সূচকে ১৩৫ তম এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ১২১ তম স্থানে রয়েছে।

এদিকে, দেশে যখন দরিদ্রের সংখ্যা বিপুলহারে বাড়ছে, তখন কিছু শিল্পপতির সম্পদ দিন দিন কয়েকগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, বিল গেটসকে পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি হয়েছেন ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি। পাশাপাশি, ব্লুমবার্গ বিলেনিয়াম ইনডেক্স অনুসারে জানা গিয়েছে, আদানির মোট সম্পদ হল ১১২.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যা মাইক্রোসফ্ট কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতার মোট সম্পদের চেয়ে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন বেশি। শুধুমাত্র চলতি বছরেই আদানির সম্পদ বেড়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যা অন্য যেকোনো শিল্পপতির তুলনায় অত্যন্ত বেশি।

Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

X