বাংলাহান্ট ডেস্ক: অক্টোবরের ১৮ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত গুজরাতের গান্ধীনগরে চলছে ডিফেন্স এক্সপো (DRDO Defence Expo)। এখানে দেখতে পাওয়া যাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে মজুত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া অস্ত্র, প্রতিরক্ষার প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম। ডিআরডিও-র তৈরি করা ৪৩০ এরও বেশি প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম মজুত থাকবে এই প্রদর্শনীতে। বিশ্বের ১০০টি দেশের প্রতিনিধিরা দেখবে সেই সব প্রযুক্তি।
এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন বিশ্বের ২৫টি দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং ৭৫টি দেশের প্রতিনিধিরা। ডিআরডিও-র এই প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী হল এশিয়ার বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রদর্শনী। এ বছর এটি ১২ বছরে পা দিল। ১২ তম প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর থিম হিসেবে ভাবা হয়েছে ‘পাথ টু প্রাইড’ বা গর্বের রাস্তা।
বেশ কিছু অস্ত্র ও প্রযুক্তির প্রদর্শন হয় এই প্রদর্শনীতে। যেমন বর্ডার সার্ভেলেন্স সিস্টেম। এই যন্ত্রটি যে কোনও আবহাওয়ায়, দিনের যে কোনও সময়ে কাজ করতে সক্ষম। এই রেডারটি নিজে থেকেই ঘুরতে পারে। শত্রুপক্ষের চলাচলের তথ্য এটি কন্ট্রোল রুমে পাঠিয়ে দেয় ছবির মাধ্যমে। এই যন্ত্রের সাহায্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী শত্রুপক্ষের চলাচলের উপর ২০ কিলোমিটার দূর থেকেই নজর রাখতে পারে।
এরপর রয়েছে লেজার ফেন্স সিস্টেম। এটি একটি বেড়া জালের কাজ করে। এই বেড়ার মধ্যে রয়েছে লেজার প্রযুক্তি। এটি যে কোনও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, সেনা এলাকা অথবা সীমান্ত রক্ষার কাজে লাগানো হয়। সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ রুখতেও এই বেড়া জালের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও প্রদর্শনীতে থাকছে প্রহার মিসাইল। এই মিসাইলের দ্বারা ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও সেনা তার লক্ষ্যভেদ করতে পারে। এটি একটি ক্যুইক রেসপন্স শর্ট রেঞ্জ মিসাইল। এই মিসাইলটি যে কোনও আবহাওয়াতেই হামলা করতে সক্ষম।
একইসঙ্গে এখানে থাকছে রুদ্রম ৩ মিসাইল। এই মিসাইলটি শত্রুপক্ষের কাছে খুবই ভয়ঙ্কর। এতে রয়েছে অ্যান্টি রেডিয়েশন ফিচার। এটি ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের রেডার ধ্বংস করে দেওয়া যায়। যার ফলে আর কোনও তথ্যই তারা না পেতে পারে। আকাশ থেকে মাটিতে হামলা চালাতে পারে এই মিসাইলটি। রুদ্রম ৩-এর রয়েছে ৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ প্রদর্শনীতে থাকছে মাউন্টেড গান সিস্টেম। এটি একটি হাইব্রিড বন্দুক ব্যবস্থা যা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে ৪৮ কিলোমিটার দূর থেকেই শত্রুপক্ষের ঘাঁটি ধ্বংস করা সম্ভব। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে এই অস্ত্রটি।
এই ক্ষেপনাস্ত্র ও প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রদর্শনীতে আরও নানারকম অস্ত্র থাকছে। ডিআরডিও-র এই প্রদর্শনীতে ভারতীয় নৌবাহিনী দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তাদের প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম প্রদর্শন করবে। এর মধ্যে রয়েছে কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, টর্পেডো টিউব লঞ্চার এবং ইনফ্রা-রেড সিগনেচার সাপ্রেশন সিস্টেম। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করে নৌবাহিনী তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে অনেকটাই। এগুলির ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন সাবমেরিনে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত রফতানির মূল্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। ব্রাহ্মোস এয়োস্পেসের সভাপতি অতুল ডি রানে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে আশাবাদী। প্রসঙ্গত, এ বছরের প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে ১৩২০টি প্রতিরক্ষা সংস্থা। এছাড়াও এখানে উপস্থিত থাকবেন ২৪টি দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও ৭৫টি দেশের প্রতিনিধিরা। এখানে ৪০০টি মউ-তে সই এবং ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে বলে জানা গিয়েছে।
গুজরাতের সংস্থাগুলি ৩৩টি মউ-তে সই করবে। মনে করা হচ্ছে, এই প্রদর্শনীর জেরে গুজরাতে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে চলেছে গুজরাতে। প্রথমবারের জন্য হ্যালের তৈরি একটি ট্রেনার বিমান প্রদর্শন হতে চলেছে। বিভিন্ন স্টার্ট আপ ও সংস্থার জন্য ৭৫টি চ্যালেঞ্জ দেওয়া হবে। পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হবে সবরমতী নদীর ধারে। এতে অংশ নেবে ১৬০০ ড্রোন।