বাংলা হান্ট ডেস্ক: একটানা প্রায় ২০০ বছর যাবৎ ব্রিটিশ (British)-দের অধীনে ছিল আমাদের দেশ ভারতবর্ষ (India)। দেশজুড়ে রীতিমতো উন্মত্ত স্বৈরাচারী শাসন চালায় তারা। এমনকি, দেদার লুঠপাটের জেরে ভেঙে পড়ে ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও। কোহিনূর হিরে থেকে শুরু করে তৎকালীন ভারত থেকে বিপুল ধন সম্পত্তি নিজেদের দেশে নিয়ে যায় ব্রিটিশরা। আর এভাবেই ধীরে ধীরে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছিল ভারতের অর্থনীতি। তবে, এবার সময় পাল্টেছে। আর তার সাথে পরিবর্তিত হয়েছে সামগ্রিক চিত্রও।
ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে এবার ব্রিটিশদেরকেই পিছনে ফেলল ভারত। যে ব্রিটিশরা একটা সময়ে ভারতে শাসন চালিয়েছে আজ তারাই অর্থনীতির বিচারে পিছিয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, গত ত্রৈমাসিকের হিসেব অনুযায়ী এবার যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে টপকে গিয়েছে ভারত। সম্প্রতি ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বে পঞ্চম স্থানে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে। পাশাপাশি, বর্তমানে বিশ্বের অর্থনীতির নিরিখে ভারতের আগে রয়েছে আমেরিকা, চিন, জাপান ও জার্মানি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতীয় অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে ৮৫৪.৭ বিলিয়ন ডলারে। যা ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী প্রায় ৬৮ লক্ষ কোটি টাকা। অপরদিকে, ব্রিটেনের অর্থনীতি এখন রয়েছে ৮১৬ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৫ লক্ষ কোটির কাছাকাছি। এদিকে, এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দারুণ কৃতিত্বকে একটি “বিশেষ মুহূর্ত” হিসেবে অভিহিত করেন। উল্লেখ্য যে, ১৭৬৯-৭০-এর দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়েই ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়েছিল ভারতে। যদিও, তার পরবর্তী ২০০ বছরে আরও একাধিক দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে হয়েছে দেশকে। যেগুলির পেছনে ব্রিটিশদের প্রভাবও অনেকাংশেই ছিল। যদিও, তাদের দীর্ঘ লুণ্ঠন এবং শোষণের ফলে সৃষ্ট হওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবার কাটিয়ে উঠতে পেরেছে ভারত।
এদিকে, ভারতে করা লুন্ঠন এবং শাসনকার্য নিয়ে ব্রিটিশদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা উপস্থিত রয়েছে যে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নাকি ভারত থেকে কোনো বড় লাভ করতে পারেনি। উল্টে ব্রিটিশদেরই অর্থে নাকি ভারতের প্রশাসন চলত। তবে, এবার তাদের সেই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভুল বলে প্রমাণ করেছেন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ উষা পট্টনায়েক। তিনি তাঁর একটি গবেষণায় ব্রিটিশদের লুঠতরাজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। পাশাপাশি, সেখানে বলা হয় যে, ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে ব্রিটিশরা প্রায় ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি টাকা নিজেদের পকেটে পুরেছে। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমান হল ৩ হাজার ৭৮০ লক্ষ কোটি টাকা।
যদিও, ব্রিটিশরা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে বাণিজ্যের মাধ্যমে এই বিপুল টাকার অধিকারী হয়। ওই গবেষণা মারফত জানা গিয়েছে, ভারতে ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিক শাসনের আগে ভারতীয়দের থেকে বস্ত্র ও চাল আমদানি করত। সেই সময়ে রুপোর মাধ্যমে চলত পণ্য আমদানি। যদিও, ১৭৬৫ সাল নাগাদ এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটানো হয়। মূলত, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত থেকে রাজস্ব আদায় করতে শুরু করে। আর সেই রাজস্বেরই প্রায় এক তৃতীয়াংশ অর্থ ভারতীয়দের থেকে পণ্য কেনার জন্য ব্যবহার করা হত। অর্থাৎ, সহজভাবে বললে, ভারতীয়দের থেকে টাকা নিয়েই তার কিছুটা অংশ ভারতীয়দেরকে দেওয়া হত। শুধু তাই নয়, ভারতীয়দের থেকে চুরি করা অর্থের সাহায্যেই ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব এসেছিল বলে দাবি করা হয় ওই গবেষণায়। যদিও, এবার সমস্ত ধাক্কা কাটিয়ে ভারতীয় অর্থনীতি এক দুরন্ত গতি লাভ করেছে। আর তার ফলেই বর্তমানে পিছিয়ে পড়েছে ব্রিটিশরা।