বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) কাছে ফের এক বড় ধাক্কা খেল চিন (China)। মূলত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চিনের একটি পদক্ষেপকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে ভারত। পাশাপাশি, তাদের একটি পরিকল্পনাকেও ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায়, ভারতের এহেন পদক্ষেপের প্রশংসা করছে একাধিক দেশ। যাদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও, এই তিনটি দেশ মিলে সম্প্রতি AUKUS নামে একটি গ্রুপ গঠন করেছে বলেও জানা গিয়েছে।
মূলত, আমেরিকা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সংযুক্ত গ্রূপ AUKUS-এর বিরুদ্ধে চিন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (International Atomic Energy Agency, IAEA) কাছে একটি রেজোলিউশন আনার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব পাশ হওয়ার আগেই ভারত এমন পদক্ষেপ নেয় যে চিনকে এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হয়। উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া ২০২১ সালে চিনের মোকাবিলা করার লক্ষ্যে একটি নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ওই তিনটি দেশ যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণ করবে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, এই অংশীদারিত্বের পরে চিন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, চিন এটিকে পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে এবং এই বিষয়ে AUKUS-এর বিরুদ্ধে IAEA-তে একটি প্রস্তাব পাশ করার চেষ্টাও করে। এমতাবস্থায়, IAEA-এর সম্মেলনে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমী দেশগুলির অধিকাংশই AUKUS সংগঠনের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি, এই দেশগুলি IAEA-তে আরও স্বচ্ছতা এবং অপ্রসারণ আশ্বাসের প্রয়োজনীয়তার উপরেও জোর দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি IAEA-এর মহানির্দেশকের কাছে গত ২৩ আগস্ট ২০২২-এ চিবের কাছ থেকে একটি অনুরোধ করা হয়েছিল। যেখানে পারমাণবিক উপাদান হস্তান্তর সংক্রান্ত চর্চা ও AUKUS-এর ৬৬ তম সাধারণ সম্মেলনের আলোচনায় অন্তর্ভুক্তির বিষয় জানানো হয়। সূত্রের খবর, IAEA-তে চিনের প্রস্তাব আসার পর ভারত তার দক্ষ কূটনীতি ব্যবহার করতে শুরু করে। মূলত, ভারত এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য IAEA-এর বেশ কয়েকটি ছোট দেশকে রাজি করিয়েছিল। পাশাপাশি, ভিয়েনায় ভারতীয় মিশন IAEA-এর বেশ কয়েকটি সদস্য দেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। যার ফলে ভারতের সফল কূটনীতির প্রভাবে চিনকে তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। এদিকে, চিন যখন নিশ্চিত হয়েছিল যে তারা এই প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, তখন ৩০ সেপ্টেম্বর চিন তার খসড়া প্রত্যাহার করে নেয়। সূত্রের মতে, ভারতের এই ভূমিকা এবং কূটনৈতিক চালচলন IAEA-এর সদস্য দেশগুলির দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে, IAEA-এর নীতি-নির্ধারণী সংস্থা, সংস্থার কর্মসূচি এবং বাজেট নির্ধারণ করে। এরমধ্যে সমস্ত সদস্য দেশের সাধারণ সম্মেলন এবং ৩৫ সদস্যের গভর্নর বোর্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ভিয়েনায় IAEA-র সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ সম্মেলন। এমতাবস্থায়, ভারতকে ২০২১-২২- এর জন্য এই বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে।
২০২১-২২ সালে IAEA-এর বোর্ড সদস্য কারা: এই বছর ৩৫ টি দেশকে বোর্ড সদস্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। তারা হল আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ব্রাজিল, বুরুন্ডি, কানাডা, চিন, কলম্বিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মিশর, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গুয়াতেমালা, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, পেরু, পোল্যান্ড, রাশিয়ান ফেডারেশন, সেনেগাল, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, গ্রেট ব্রিটেন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম।