বাংলাহান্ট ডেস্ক : সামনে এল এক বিস্ফোরক দাবি! প্রকাশ্যেই ভারতীয় সংবিধানকে (Indian Constitution) পরিবর্তন করে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ (Hindu State) বানানোর ঘোষণা করা হল। এমনকি দাবি করা হয় নতুন ‘সংবিধান’ তৈরির কাজও চলছে পুরোদমে। খসড়াও নাকি তৈরি হয়ে গিয়েছে। উদ্যোক্তা বারাণসীর শঙ্করাচার্য পরিষদ নামে এক সংগঠন। এমনই চাঞ্চল্যকর খবর ছড়িয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
শঙ্করাচার্য পরিষদ দাবি করে, ২০২৩ সালেই মাঘ-মেলা উপলক্ষে প্রয়াগরাজের ‘ধর্ম সংসদ’-এ ঘোষণা করা হবে সেই ‘সংবিধান’। নতুন ‘সংবিধান’ অনুযায়ী, ভারতে ভোটাধিকার থাকবে শুধু হিন্দুদের। বাকি ধর্মের প্রতিনিধিরা দেশে থাকতে পারবেন, কিন্তু অন্য আরও সমস্ত অধিকারই থাকবে, কিন্তু ভোট দিতে পারবে না। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। তৃণমূল থেকে সিপিএম সকলেই বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারকে বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সঙ্ঘ পরিবারের কট্টরপন্থী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যদি দাবি করে এই রকম কোনও কর্মসূচির কথা তাঁদের জানা নেই। অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপিও।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এক দল সাধুসন্ত এবং বেশ কিছু বিশিষ্টজন মিলে ‘হিন্দু রাষ্ট্রের’ রূপরেখা তৈরি করছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনের পক্ষে যে ধর্ম সংসদ হয়েছিল, সেখানেই আলাদা ‘সংবিধান’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেই জানা যাচ্ছে। এখন ৩০ জনের একটি দল সেই কাজ করছে। শঙ্করাচার্য পরিষদের সভাপতি স্বামী আনন্দস্বরূপ বলেন, ‘মোট ৭৫০ পাতার সংবিধান তৈরি হবে যা নিয়ে এখন পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা চলছে। আলোচনায় অংশ নেবেন ধর্মীয় পণ্ডিত এবং বিশেষজ্ঞরা। তার ভিত্তিতে সংবিধানের অর্ধেক (৩০০ পাতার মতো) প্রকাশ্যে আনা হবে ২০২৩ সালের মাঘ-মেলায়।’ এর মধ্যে শিক্ষা, নিরাপত্তা, আইন ব্যবস্থা, ভোটদান-সহ কিছু বিষয় নিয়ে ৩২ পাতার খসড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন আনন্দস্বরূপ।
আনন্দস্বরূপ এই বিষয়ে জানাতে গিয়ে এমন আশাও করেছেন যে, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার ভারতের সঙ্গে এসে যাবে।’ বর্তমান সময়ের সংসদীয় ব্যবস্থার বদলে তৈরি হবে ৫৪৩ সাংসদের ‘ধর্ম সংসদ’। ব্রিটিশ সময়কাল থেকে চলে আসা আইন কার্যকর হবে না সংযুক্ত ভারতে। সবই চলবে ‘বর্ণাশ্রম’ ব্যবস্থা মেনে। বিচারব্যবস্থা চলবে ‘ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের নিয়মে’। শিক্ষায় ফিরবে প্রাচীন গুরুকূল পদ্ধতি। দেশের সমস্ত নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ হবে বাধ্যতামূলক। আর কৃষিক্ষেত্র থাকবে সম্পূর্ণ ভাবে করমুক্ত। এ ছাড়া, পরিবর্তন হবে দেশের রাজধানীও। দিল্লির বদলে কাশী।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘এ সব হচ্ছে আরএসএস-এর মস্তিস্কপ্রসূত ব্যাপার। বহুমতের ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদের ভাবনা। এই সব কথা বলা হলে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও ধাক্কা খাবে।’ একই ভাবে নিন্দায় সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় বিষয়। বহুত্বের দেশ ভারতে এমন ভাবনার প্রতিবাদ করা উচিত সকলের।’ সকলের তোপ যাদের দিকে, সেই সঙ্ঘ পরিবার যদিও এ সম্পর্কে কিছুই জানে না বলে দাবি করেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় মুখপাত্র বিনোদ বনসল জানান, ‘এমন কোনও কর্মসূচি বা ভাবনাই নেই পরিষদের। কারা এটা তৈরি করছেন বা কী করছেন সে ব্যাপারে পরিষদের কিছু জানাই নেই।’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আরএসএস যে হিন্দু রাষ্ট্রের কথা বলে তা ভৌগলিক সীমারেখায় তৈরি নয়। তা এক সংস্কৃতি। ভারতীয় জনতা পার্টির ভারতীয় সংবিধানের উপরে সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’