বাংলাহান্ট ডেস্ক: দেশ ছাড়ছেন ভারতীয়রা। শুধু দেশই না, নাগরিকত্বও ছাড়ছেন তাঁরা। ভারতের বেশিরভাগ ধনী ব্যক্তিরাই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এর জন্য তাঁরা রেসিডেন্স বাই ইনভেস্টমেন্টের (Residence by investment) পথ অবলম্বন করছেন। এই পথে ভারত ছাড়া ধনী ব্যক্তিদের বলা হয় এইচএনআই বা হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়াল। অথবা ডলার কোটিপতি।
প্রশ্ন হচ্ছে, রেসিডেন্স বাই ইনভেস্টমেন্ট কাকে বলে? হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়াল (HNI) হতে কত সম্পত্তি রাখতে হবে? হঠাৎ ভারতের নাগরিকত্বই বা ছাড়ছেন কেন তাঁরা? কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২০২২ সালে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল অবধি এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক ভারতীয় যাঁরা নাগরিকত্ব ছেড়েছেন।
একাধিক মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদেশে উন্নত পরিষেবা থাকায় তাঁরা এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যেমন উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং সর্বোপরি উন্নত জীবনযাপনের জন্য দেশ ছাড়ছেন ভারতীয়রা। এছড়াও আরও অনেক কারণই রয়েছে। যেমন একটি পরিবার জানিয়েছেন, তাঁরা ২০১৯ সালে ক্যানাডা চলে গিয়েছিলেন। ২০২২ সালে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
যাঁদের মোট সম্পত্তি ১০ লক্ষ ডলারের বেশি হয়, তাঁদের বলা হয় হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়াল। অর্থাৎ ভারতীয় মূল্যে ৮ কোটি ২০ লক্ষ টাকার বেশি থাকলে তিনি এইচএনআই। হেনলি গ্লোবাল সিটিজেনস রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে মোট ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার এইচএনআই রয়েছেন। তাঁরা দেশের মোট ৯টি শহরে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী দিল্লি এবং অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বই।
এইচএনআইয়ের দৌড়ে ভারত চার নম্বরে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশে বসবাসের মাধ্যমে বিনিয়োগের চাহিদা গত কয়েক বছরে অনেকটাই বেড়েছে। এক্ষেত্রে আমেরিকার ইবি-৫ ভিসার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার গ্লোবাল ট্যালেন্ট ইন্ডিপেনডেন্ট ভিসা, পর্তুগালের গোল্ডেন ভিসা এবং গ্রিসের রেসিডেন্স বাই ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম খুবই জনপ্রিয়।
কিন্তু এই রেসিডেন্ট বাই ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন কোথায়? ধরা যাক আপনি পর্তুগালের স্থায়ী বাসিন্দা হতে চান। সেক্ষেত্রে আপনাকে সেখানে ন্যূনতম ৪.৫ কোটি টাকার সম্পত্তি কিনতে হবে। একইসঙ্গে পর্তুগিজদের জন্য কমপক্ষে ১০টি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাঁচ বছর ধরে এই বিনিয়োগ করার পর আপনি পর্তুগালের পাসপোর্ট পাবেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের ১৫০টি দেশে ভিসা ছাড়া ঘুরতে পারবেন আপনি।
যদিও একটি রিপোর্ট অনুসারে, এই প্রকল্প বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্তুগাল। আমেরিকার ইবি-৫ ভিসা পেতে গেলে আপনাকে পাঁচ থেকে সাত বছরে কমপক্ষে ৬.৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। একইসঙ্গে আমেরিকানদের জন্য ন্যূনতম ১০টি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে পাঁচ বছর পর মিলবে মার্কিন নাগরিকত্ব।
একটি রিপোর্ট বলছে, ভারত একটি গরিব ও অসম দেশ। এখানে ধনীদের হাতে প্রচুর পয়সা রয়েছে। ২০২০ সালে বিশ্বের মোট রোজগারে ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। এর অর্ধেকটা হয়েছিল ধনী দেশগুলিতে। অন্যদিকে ভারতে ধনীরা আরও ধনী হয়েছে এবং গরিবরা আরও গরিব। আমাদের দেশে মধ্যবিত্তরা উচ্চবিত্তদের থেকে অনেকটাই গরিব। এই অসাম্যের কারণেই দেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিতে চান অনেকে।