বাংলা হান্ট ডেস্ক : অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যার জন্য সারা দেশের কাছে ভারতীয় রেলের (Indian Railways) মুখ পুড়েছে একাধিকবার। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ইংরেজদের হাত ধরেই প্রথম সফর শুরু হয়েছিল ভারতীয় রেলের (Indian Railways)। সেই থেকে ভারতীয় রেল (Indian Railways) বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। তবে ভারতীয় রেলের (Indian Railways) ইতিহাসে যেমন গর্বের মুহূর্ত রয়েছে, তেমনি রয়েছে বেশ কিছু লজ্জাজনক ঘটনাও।
সাড়ে তিন বছর লেট ছিল ভারতীয় রেলের (Indian Railways) এই ট্রেন
এমনিতে ট্রেন লেট হওয়া নিয়ে ভারতীয় রেলের বিরুদ্ধে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ আজকের নয়। তাই এখন রোজকার রেলযাত্রীদের কাছে ট্রেন লেট হওয়ার ঘটনা একপ্রকার জলভাতে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে রয়েছে এক লজ্জাজনক ট্রেন লেট হওয়ার ঘটনা। সাধারণত ট্রেন লেট হলে তা কয়েক ঘন্টার ব্যাপার হয়ে থাকে।
কিন্তু জানলে অবাক হবেন, ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এমন একটি ট্রেন ছিল যা নয় নয় করে মোট সাড়ে তিন বছর লেট হয়েছিল। তবে এখানে বলে রাখি এই ট্রেনটি কিন্তু কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন ছিল না। এটি ছিল মূলত একটি মালবাহী ট্রেন। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে রওনা দেওয়া এই ট্রেনটির গন্তব্যস্থল ছিল উত্তরপ্রদেশের বাস্তি স্টেশন।
এই দুই স্টেশনের মধ্যে মোট দূরত্ব ১৪০০ কিমি। হিসাব অনুযায়ী ট্রেনে করে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে মোট সময় লাগে ৪২ ঘন্টা। কিন্তু পণ্যবাহী ট্রেনটির এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লেগেছিল মোট সাড়ে তিন বছর। যা ভারতীয় রেলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিলম্বের রেকর্ড। সূত্রে খবর ওই ট্রেনটিতে মোট ১৩১৬ বস্তা সার ছিল। যার দাম ছিল ১৪ লক্ষেরও বেশি।
আরও পড়ুন : ট্রেনের টিকিট কাটা এখন আরও সহজ! অত্যাধুনিক পরিষেবা এনে তাক লাগল IRCTC
জানা যায়, উত্তর প্রদেশের বাস্তির একজন ব্যবসায়ী ওই ট্রেনটি ভাড়া করেছিলেন সারের বস্তা পাঠানোর জন্য। কিন্তু ২০১৪ সালের নভেম্বরে ট্রেনটি বিশাখাপত্তনাম থেকে রওনা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে উত্তরপ্রদেশের বাস্তি স্টেশনে না পৌঁছানোয় ওই ব্যবসায়ী নিজে থেকেই রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সেইসাথে একাধিক অভিযোগও দায়ের করেছিলেন তিনি।
কিন্তু কোনো ব্যবস্থা তো নেওয়াই হয়নি উল্টে দিনের পর দিন কোন খোঁজ মেলেনি সেই সারভর্তি মালবাহী ট্রেনের। আজ পর্যন্ত জানা যায়নি কিভাবে ৪২ ঘন্টার পথ পেরোতে ওই মালবাহী ট্রেনটির সাড়ে তিন বছর সময় লেগে গিয়েছিল। অনেক তদন্ত করেও সে সময় ট্রেনটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে অবশেষে সাড়ে তিন বছর পর ২০১৮ সালের জুলাই মাস নাগাদ ট্রেনটি বাস্তি স্টেশনে এসে পৌঁছায়।
ততদিনে ট্রেনের মধ্যে থাকা সমস্ত সার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সমস্ত সার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওই ব্যবসায়ী তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সেইসাথে কোম্পানিকেও টাকা দিতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। তবে বছরের পর বছর ধরে একাধিক তদন্ত করার পরেও ট্রেনটি পৌঁছাতে কেন এত লেট হয়েছিল কিংবা এতদিন ধরে ট্রেনটির নিখোঁজই বা কেন ছিল আজ পর্যন্ত তার কোন ব্যাখ্যাই দিতে পারিনি রেল কর্তৃপক্ষ। তবে এপ্রসঙ্গে ভারতীয় রেলের আধিকারিকরা অনুমান করেছিলেন একটাই জিনিস। তা হল অনেক সময় দেখা যায় ওয়াগান পুরনো হয়ে গেলে, সেগুলিকে রেল-ইয়ার্ডে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হয়তো এই মালগাড়ির ক্ষেত্রেও এমনই কোন ঘটে থাকতে পারে।