বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী (Bangladeshi Infiltrator) সন্দেহে রাজ্য পুলিশ যখন তাঁকে আটক করে, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২০। সেই সময় বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাঁর। কিন্তু পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ফলে সেই বিয়ে আর হয়নি। তারপর কেটে গিয়েছে সাতটা বছর। ভারতের কছে নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে করতে এখন তাঁর বয়স ২৭। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্ট মেনে নিয়েছে যে তিনি ভারতীয়।
২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের কাছে গ্রেফতার করা হয় ওই মহিলাকে। তখনও তিনি নিজেকে ভারতীয় হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় পুলিশ তাঁর কথা শোনেনি। এরপর আদালতে তোলা হলে সেখানেও ‘ভারতে অনুপ্রবেশের অপরাধে’ ৪ বছরের কারাবাসে পাঠানো হয় তাঁকে।
তারপর কেটে গিয়েছে সাতটি বছর। নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে করতে ওই মহিলা আজ ২৭ বছরের যুবতী। অবশেষে কলকাতা হাই কোর্ট তাঁকে ভারতীয় হিসেবে মেনে নিয়েছে। উল্লেখ্য, তিনজন সরকারি আধিকারিক এবং রাজ্য সরকারের কৌঁসুলিও আদালতে যুবতীর পক্ষে বয়ান দিয়েছেন। ফলে ওই যুবতীকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়কে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
একটি ন’পাতার রায়ে বিচারপতি সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী বলেন, “সঠিক তদন্ত জীবনে একটি অধিকার। কিন্তু এই ঘটনায় এক যুবতী নিপীড়িত এবং দীর্ঘ যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “মেয়েটি যে ভারতীয় ছিল তা তদন্তকারী আধিকারিক জেনেও তাঁকে বিচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেই তদন্তটি অসম্পূর্ণ ছিল এবং চটজলদি একটি রায় দিয়ে দেওয়া হয়।” তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন বিচারপতি রায়চৌধুরী।
মহিলার আইনজীবী আশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তাঁর একটি কথাও শুনতে রাজি হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি নাগরিক আইন, ১৯৪৬-এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়। মহিলার বাবা থানায় মেয়ের জন্য একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। পরে নিম্ন আদালতে তিনি জানান, তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছেন। তাঁর কাছে রেশন কার্ডও আছে। মহিলার বাবার দাবি সমর্থন করেন তিনজন সরকারি আধিকারিকও।
গ্রেফতারির পর ওই মহিলাকে প্রায় দেড় মাস হাজতে রাখা হয়। এরপর নিম্ন আদালতের রায়ের পর ১১ মাসেরও বেশি সময় বন্দী থাকেন তিনি। পরে করোনার জন্য তাঁর জামিন হয়। ওই মহিলা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সেই সময় তাঁর বিয়ে হয়নি ঠিকই। তবে তাঁর প্রেমিক তাঁর জন্য সাত বছর অপেক্ষা করেছেন।